নামেই শুধু খেলার মাঠ। কিন্তু বছরজুড়েই নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকার শেষ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে চলে মেলার আয়োজন। মেলার জন্য এই স্টেডিয়ামে সবসময়ই চলে খুঁড়াখুঁড়ি আর ইট বিছানোর কাজ। বাদ যায় না গরুর হাটও। কিন্তু ছাড়িয়ে গেছে াথীতের রেকর্ডও। এবার মাস পেরোতে না পেরোতেই আবারো বানিজ্যমেলা আয়োজনে চলছে তোড়জোড়।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এ মাঠে শেষ হয়েছে সিলেট চেম্বারের আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলা-২০১৮। সিলেট চেম্বারের এ বাণিজ্যমেলা শেষ হতে না হতেই আরেকটি বাণিজ্যমেলার আয়োজন করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
গত শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর শাহী ঈদগাহ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এ মেলার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এই মাঠে ঘনঘন মেলার আয়োজনে যেমন খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় শিশু-কিশোররা, তেমনি লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বানিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে মেলা আয়োজনের অনুমতি ও সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত পাঁচ বছর ধরেই সদর উপজেলা প্রশাসন বাণিজ্য মেলা এবং পশুর হাটের জন্য এই মাঠ ভাড়া দিয়ে আসছে। খেলার মাঠে মেলার আয়োজন না করতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর কোন তোয়াক্কা না করেই দেয়া হয়েছে মেলা আয়োজনের অনুমতি।
তবে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ মেলার অনুমতি প্রদানে তাঁর কোন সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে বলেন, এটি একটি সরকারি মাঠ। এখানে আমার কোন কিছুই করার নেই। এমনকি মেলার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান। তিনি বলেন, যারা মেলা আয়োজন করেছে তাঁরা বানিজ্যমন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে করছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন অবগত আছেন।
মাত্র দেড় মাস আগে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৮। এই সময়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরী গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছিলেন- এই মাঠে আর কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। অথচ প্রায় একমাস যেতে না যেতেই আবারো একই স্থানে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রি মেলার আয়োজন করছে।
এই খেলার মাঠকে মেলার স্থান হিসেবে ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি রিট আবেদন করেছিলেন নগরীর শাহী ঈদগাহর বাসিন্দা নাজির আহমেদ চৌধুরীর ছেলে মনজু জামান চৌধুরী। পরে আদালত মাঠটিকে স্থানীয় শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে রাখার জন্যও নির্দেশনা প্রদান করেন। ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
এছাড়াও আইন অনুযায়ী খেলার মাঠে খেলা ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার কিংবা ভাড়া দেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ। খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। এই আইন লঙ্ঘনে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় সাজার বিধান রয়েছে। অথচ এই আইন লঙ্ঘন করেই খেলার মাঠ মেলা জন্য ভাড়া দিচ্ছেন প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) বিকালে শাহী ইদগাহস্থ শেখ রাসেম মিনি স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায় বাণিজ্যমেলার স্টল বসানোর জন্য চলছে কাজ। বসানো হচ্ছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। ইতোমধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে মেলা আয়োজনের সকল কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
তবে মেলার আয়োজকরা বলছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি নিয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদকে এবিষয়ে অবগত করা হয়েছে। তারা সবার অনুমতি নিয়েই মেলা করছেন বলে জানিয়েছেন মেলার আয়োজকরা।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হাসিন আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এই মেলার সমন্বয়কারী এম এ মঈন খান বাবলু বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালর অনুমতি নিয়েই মেলার আয়োজন করছি।
অপরদিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলছেন, বাণিজ্যমন্ত্রণালয় মেলা আয়োজনে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, এখানে মেলার বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। মেলার আয়োজকরা বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি এনে মেলা আয়োজন করছেন।
নির্বাহী সম্পাদক