“পাকি প্রেমে যারা হাবুডুবু খেয়েছে; তাদেরকেও উপযুক্ত জবাব বাংলার মানুষকে দিতে হবে। তাদেরকেও শাস্তি দিতে হবে। তাদের পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। বাঙালি যদি এটা না পারে, তাহলে নিজেদের অস্তিত্ব থাকবে না।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রার দিকে ইঙ্গিত করে রোববার ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
পঁচাত্তরের পর ক্ষমতা দখল করা জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া উভয়কেই ‘পাকিস্তান প্রেমী’ বলেন শেখ হাসিনা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “৭৫’র পর পুরো ইতিহাসই বদলে গিয়েছিল। এমনকি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী; এটাও বলা যাবে না। পাকিস্তান যে হানাদার ছিল; সেটাও ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য শুধু হানাদার বাহিনী বলা হত। পাকি প্রেম এমন পর্যায়ে ছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর যারাই ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তারা দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“তারা তো এদেশের অগ্রযাত্রা চায়নি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর এজেন্ডা অন্যভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল। এদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হলে পাকিস্তান খুশি হবে। আর,পাকিস্তানকে খুশি করাই ছিল.. ।”
এদের মধ্যে জিয়া, খালেদা জিয়ার সঙ্গে বর্তমানে নিজের বিশেষ দূত সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের নামও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সকলের একই এজেন্ডা ছিল।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে চ্যালেঞ্জ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
“পাকিস্তানিরা যে জাহাজে করে অস্ত্র আনছিল, সেই সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। বাঙালির প্রতিরোধের মুখে সে তা পারে নাই। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কেউ দেখাতে পারবেন কি না- জিয়া সেক্টর বা সাব সেক্টর কমান্ডার হিসাবে কোনো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।”
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের অংশে পড়া বর্তমান বাংলাদেশ শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল ধারাবাহিকভাবে। অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের পর বাঙালি যখন স্বাধীনতার বিকল্প দেখছিল না, তখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির উপর।
বাঙালির ইতিহাসে বিভীষিকাময় সেই রাতটি স্মরণে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে নেয় সংসদ।
এই দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মহল দাবি তুললেও জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গটি তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতিসংঘের গণহত্যা দিবস হিসাবে একটা দিন আছে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে যে দিনে গণহত্যা শুরু হয়; সেই সেই দেশ সেই সেই দিনকে গণহত্যা দিবস হিসাবে পালন করে থাকে।”
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সঙ্গে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং তাদের যারা মদদ দিয়েছিল, তারা সবাই সমভাবে দোষী।
“তাদের বিচার যেন এই মাটিতে চলতেই থাকে, তাদের কোনো ক্ষমা নাই। আর মদদদানকারীরা ঘৃণার পাত্র।”
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের বন্দি অবস্থার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “এই যে তারা গণহত্যা চালিয়েছিল; আমরা নিজেরাও তো সাক্ষী।
“অল্প সময়ের মধ্যে এত মানুষ হত্যা; এরকম গণহত্যা আর কোনো দেশে ঘটে নাই। যেটা এই মাটিতে ঘটেছিল।”
আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতারা জার্মানির ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ এর সমালোচনা করেন; যে সংস্থাটি দাবি করেছে, বাংলাদেশে এখন স্বৈরতন্ত্র চলছে।
শিল্পমন্ত্রী আমু বলেন, “জার্মানির একটা ভুঁইফোড় সংগঠনকে পয়সা দিয়ে একটা কথা বলে দেওয়া হলো। একটা ২০ দলের একটা দলের মতো, যাদের কথা কেউ শোনে না।”
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ জার্মান সংস্থার এই জরিপকে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে বলেন, “জাতি যখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আনন্দে আন্দোলিত, তখনই ষড়যন্ত্র করে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।”
কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, “তিন পয়সার জরিপ, থ্রি পেনি অপেরা! এতে কোনো লাভ হবে না।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতেই এগুলো করা হচ্ছে।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ জহির এবং ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদও বক্তব্য রাখেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান