বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকুলে মাছ আহরণে গিয়ে মাছ ধরার বোটসহ নিখোঁজ রয়েছেন ১৪ জেলে। ২৫ দিন ধরে তাদের সন্ধান পাওয়া না যাওয়ায় তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পরিবারের লোকজন। জলদস্যুদের কবলে পড়ে তাদের কোনো অঘটন ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এর পুরো রহস্য বোট মালিক কেফায়েত উল্লাহ অবগত বলে দাবি করেন নিখোঁজদের পরিবারের লোকজন। এই নিয়ে কায়ুম সওদাগরের আচরণ এবং ভূমিকা রহস্যজনক মনে করা হচ্ছে। তাই তাকে আইনের আওতায় আনার দাবিও করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর মনির আহামদ মাঝির নেতৃত্বে মাছ আহরণে গিয়ে নিখোঁজ হয় মহেশখালীর কায়ুম সওদাগরের মালিকানাধীন ‘এফবি রিফাত’ নামের বোটটি। ওই ফিশিং ট্রলারে ১৪ জেলে ছিল। মাছ ধরতে যাওয়ার ৭/৮ দিন পরই তাদের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। স্বাভাবিক ১০ দিনের মধ্যে মাছ ধরে কূলে ফিরে নিয়ম থাকলেও ২৫ দিনেরও বোটসহ জেলেরা ফিরে না আসায় তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে জলদস্যুদের কবলে পড়ে ১৪ জেলের জীবনে বড় কোনো অঘটন ঘটেছে।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন, আহমদ উল্লাহর ছেলে মনির আহমদ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. আব্দুল্লাহ, শাহ আলমের ছেলে আবুল ফয়েজ, মো. হাসানের ছেলে নুর মোহাম্মদ, শাহজাহানের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, কুইল্যা মিয়ার ছেলে মো. রশিদ, জাফর আলমের ছেলে রফিক আলম, শফি আলমের ছেলে মো. আনছার, মো. আলীর ছেলে মো. মুফিজ, ঈসমাইলের ছেলে সোলতান, রহমানের ছেলে মো. আমান উল্লাহ, আব্দুল করিমের ছেলে সালেহ আহমদ- তার ভাই মো. আলী ও আজমের ছেলে মো. ইউনূছ।
কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজারে কাইয়ুম সওদাগরের একটি বোটটি ২৫ দিন ধরে সাগরে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তার কি জলদস্যুদের কবলে পড়েছে নাকি ইঞ্জিন বিকল হয়ে সাগরে ভাসমান অবস্থায় আছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে নিখোঁজ ১৪ জেলের জন্য তাদের পরিবারের হাহাকার চলছে। তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। তারা জেলেদের সন্ধান পেতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ক্লু তারা পায়নি। তাদের সন্ধান চেয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন। কিন্তু কেউ তাদের সন্ধান করতে পারছে না।
স্বজনদের দাবি, অন্য বোটের জেলেদের মাধ্যমে তারা জেনেছেন- ১৩ জানুয়ারি উখিয়া রেজুবিল বরাবর বঙ্গোপসাগর এলাকায় কায়ুম সওদাগরের মালিকানাধীন অন্য একটি বোট নিখোঁজ ‘এফবি রিফাত’ বোটটিকে রশি দিয়ে টেনে আনছিল। তখন ‘এফবি রিফাত’ বোটে দন্ডায়মান কোনো মানুষ দেখা যায়নি। তবে শোয়া অবস্থায় মানুষকে দেখতে পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী অন্য বোটের এক জেলে সাংবাদিকদেরও এই বক্তব্য দিয়েছেন।
স্বজনেরা আশঙ্কা করছেন, বোটটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জলদস্যুরা বোট মালিক কায়ুম সওদাগরকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করেন। কিন্তু তিনি মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জলদস্যুরা জেলেদের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করেছেন। এই জন্য এর দায়ভার বোটমালিক কায়ুম সওদাগরের চাপাচ্ছেন নিখোঁজদের স্বজনেরা। এর দায়ে তাকে আইনের আওতায় রহস্য উদঘাটন করা দাবি করেছেন তারা। এই দাবি জানিয়ে তারা গত বৃহস্পতিবার এক মানববন্ধন করেন এবং ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
ওই বোটের মাঝি মনির আহমদের মামা শেখ আহামদ জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করছেন সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খায়রুজ্জামান। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে বোট মালিক কায়ুম সওদাগরকে আটক করা হয়। কিন্তু পরে জেলা বোট মালিক সমিতির সভাপতি পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানে আশ^স্তায় তাকে ছেড়ে দেন পুলিশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোট মালিক মালিক কায়ুম সওদাগর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাছ আহরণে গিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে তাদের মোবাইলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ৫ জানুয়ারী ফিরে আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা ফিরেনি। তাদের ভাগ্য কি ঘটেছে তাও জানতে পারছি না।
এদিকে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ে মেয়র মুজিবুর রহমানের সমন্বয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নিখোঁজ জেলেদের স্বজন, ওসি (তদন্ত) খাইরুজ্জামান এবং বোট মালিক কাইয়ুম সওদাগর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাইরের যে অন্য বোটের মাঝিসহ অন্য জেলেরা নিখোঁজ বোট এফবি রিফাত বোটটিকে দেখেছেন তারা এখন সাগরে থাকায় আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা ফিরে আসলে তাদের সাক্ষ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এ ব্যাপারে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, `জেলেদের নিখোঁজের বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। এই বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। জেলেদের যে কোনো সন্ধান পেতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’
নির্বাহী সম্পাদক