বাংলাদেশের টাকা ভারতের রুপির চেয়ে শক্তিশালী হতে যাচ্ছে। ডলারের বিপরীতে অব্যাহতভাবে পড়ছে রুপির দাম। গতকাল শুক্রবারও (২৬ অক্টোবর) রুপির বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ২০ পয়সা। এখন এক ডলার কিনতে ভারতীয়দের খরচ করতে হচ্ছেঠ ৭৩.৪৭ রুপি। শুধু তা-ই নয়, ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশি টাকার বিপরীতেও দরপতন হয়েছে ভারতীয় রুপির।
এতে বাংলাদেশ থেকে যারা বেড়াতে বা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন তাদের সুবিধা হলেও বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারতের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশেরই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ডলারে হয়। এ কারণে রুপির দরপতনে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমদানির ক্ষেত্রে ভারতনির্ভর হওয়ায় বাংলাদেশের খরচ বেড়ে যাবে। এখন এক টাকা ১০ পয়সায় মিলছে এক রুপি। ফলে বাংলাদেশি ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ভারতের ৯০ রুপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ডলারে হওয়ার কারণে ভারত থেকে কোনও পণ্য আনতে গেলে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। তবে বাণিজ্যটা যদি রুপিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের উপকার হবে।’ তিনি বলেন, ভারতীয় মুদ্রার পতনের কারণে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিও কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। কারণ, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আগের চেয়ে বেশি রুপি খরচ করে আমাদের পণ্য কিনতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে ভারতনির্ভর হওয়ায় বাংলাদেশের খরচ বেড়ে যাবে। আর ভারত বাংলাদেশে পণ্য আগের চেয়ে বেশি দামে রফতানি করে বেশি লাভবান হবে।’
এদিকে টাকা ও রুপির সঙ্গে ডলারের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডলারের বিপরীতে রুপি যে হারে দর হারাচ্ছে, টাকার দরপতন হচ্ছে সে তুলনায় কম। এ কারণে রুপির সঙ্গে বিনিময়ে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। আর গত ১০ মাসের ব্যবধানে রুপির মান কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য দাঁড়ায় ৭৩ দশমিক ৪৭ রুপিতে। এ বছরের শুরুতে (১ জানুয়ারি) যা ছিল ৬৩ দশমিক ৮৮ রুপি। পাশাপাশি এখন বাংলাদেশে এক ডলারের মূল্য ৮৩ টাকা ৮৩ পয়সা। এক বছর আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা ৮৫ পয়সা।
জানা গেছে, ভারতে বাংলাদেশে রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য রয়েছে ৯০০ কোটি ডলারের মতো। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে ভারতে রফতানি হয়েছে মাত্র ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য। বাকি ৮০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য ভারত থেকে আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর বাইরে চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে এখন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যাচ্ছেন।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ২০ লাখ বাংলাদেশি ভারত সফর করেছেন। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র সোয়া পাঁচ লাখ। আমদানি-রফতানিতে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাকা শক্তিশালী হলেও বা রুপির মান কমলেও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। তবে যারা ভারত ভ্রমণ করবেন কিংবা কাঁচা টাকা ভাঙান তারা লাভবান হবেন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মান পড়ে যাওয়ার কারণে ভারতের রফতানিকারকরা বেশি সুবিধা পাবেন। রুপির দরপতনের ফলে ভারত রফতানি সক্ষমতায় এগিয়ে যাবে। তবে ভারতে বাংলাদেশের রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় রুপির দরপতনে আমাদের লাভ হবে।’ তার মতে, ভারতীয় মুদ্রার মান পড়ে যাওয়ার ফলে আমাদের আমদানি পণ্যের দাম কমে যাওয়ার কথা। কারণ, বাংলাদেশে পণ্য রফতানি করতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ব্যয় কমে যাবে।
মহিউদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু ভারত থেকে আমাদের বেশি পণ্য আমদানি করতে হয়, সে কারণেও আমদানি পণ্যের দাম কমে যাওয়ার কথা।’
বার্তা বিভাগ প্রধান