Home » সিলেট নগরীতে বিদ্যুৎ বিলে ‘তুঘলকি কাণ্ড

সিলেট নগরীতে বিদ্যুৎ বিলে ‘তুঘলকি কাণ্ড

প্রিপেইড মিটার নেই বলে প্রতি মাসের বিলের কাগজ দেয়া হচ্ছে না গ্রাহকদের। হঠাৎ বিল দেয়া হলেও কোনো মাসে দেয়া হচ্ছে একেবারে কম, আবার কোনো মাসে বিপুল অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত বিলের কাগজ না দেয়ায় গ্রাহকরা বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে ইউনিট জমা হতে থাকায় বেড়ে যাচ্ছে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দামও।
এমন ‘তুঘলকি কাণ্ড’ ঘটছে সিলেট নগরীর ২১নং ওয়ার্ডে। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ভিন্ন কথাই বলছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযুগী এবং গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রিপেইড মিটার প্রকল্প হাতে নেয়। ২০২১ সালের মধ্যে দুই কোটি বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতার আনার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ চলছে। তবে পুরনো অ্যানালগ বা ডিজিটাল মিটারের পরিবর্তে প্রিপেইড মিটার বসানোর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। গ্রাহকদেরকেও এ ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেয়া হয়নি।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর ২১নং ওয়ার্ডের লামাপাড়া, রায়নগর, সোনারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু বাসা-বাড়িতে প্রিপেইড মিটার আছে। বাকিগুলোতে এখনও পুরনো অ্যানালগ বা ডিজিটাল মিটার রয়েছে। পুরনো মিটারধারী গ্রাহকদের গেল প্রায় তিন মাস ধরে বিলের কাগজ দিচ্ছে না বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ কর্তৃপক্ষ।
এর ফলে একসাথে কয়েক মাসের বিল জমে গিয়ে চাপ বাড়ছে গ্রাহকদের ওপর। তাছাড়া ইউনিট বাড়তে থাকায় বেড়ে যাচ্ছে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দামও। কেননা, নিয়ম অনুসারে আবাসিক খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার ০ থেকে ৫০ ইউনিটের মধ্যে থাকলে এক দাম, ০ থেকে ৭৫ ইউনিটের মধ্যে থাকলে আরেক দাম। এভাবে ৭৬-২০০ ইউনিট, ২০১-৩০০ ইউনিট, ৩০১-৪০০ ইউনিট, ৪০১-৬০০ ইউনিট এবং ৬০১ ইউনিটের উপরে যতো ইউনিট হবে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম আলাদা। অর্থাৎ, ব্যবহৃত ইউনিট যতো বাড়তে থাকে, দামও ততো বাড়তে থাকে।
শুধু তাই নয়, অনেক গ্রাহকের কয়েক মাসের বিল একসাথে জমা হওয়ায় তাদের ওপর পড়ছে বাড়তি চাপ।
গ্রাহকদের অভিযোগ, যেসব গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার নেই, তাদেরকে হয়রানি করছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকদের অব্যাহত ধরনা দেয়ার ফলে কর্তৃপক্ষ দু-চারজনকে বিলের কাগজ প্রদান করে। তবে এক্ষেত্রে কোনো মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিল দেখানো হয়, আবার পরের মাসে বিল দেখানো হয় ৫০০-১০০০ টাকা। গ্রাহক যতো ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তার ভিত্তিতে সঠিক পরিমাণ বিল দেয়া হচ্ছে না।
জয়নাল আবেদীন নামের এক গ্রাহকের বিলের কাগজে দেখা যায়, তাকে এক মাসে বিলের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১১৬ টাকা। কিন্তু পরের মাসে তার বিলের পরিমাণ দেখানো হয় ৯৯৪ টাকা!
এ প্রসঙ্গে ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন  বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ এই সমস্যার মধ্যে আছেন। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর অফিসে গেলে তারা প্রিপেইড মিটার বসানোর কথা বলে দায় সারে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের প্রিপেইড মিটার এখনও নেই, তাদেরকে কেন বিলের কাগজ নিয়মিত দেয়া হবে না?’
কাউন্সিলর তুহিন আরো বলেন, ‘বিল জমা হওয়ায় মানুষের ওপর চাপ পড়ছে। তাছাড়া ইউনিট বাড়তে থাকায় দামও বেড়ে যাচ্ছে। পুরনো মিটারধারী দু-চারজনকে বিলের কাগজ দেয়া হলেও বিলের পরিমাণ এক মাসে কম আরেক মাসে বেশি দেখানো হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমেদ  বলেন, ‘আমাদের অধীনে প্রায় ৭৮ হাজার গ্রাহক আছেন। তন্মধ্যে প্রায় ৬৪ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটার বসিয়েছেন। আমরা যেসব গ্রাহক এখনও পুরনো মিটার বদলিয়ে প্রিপেইড মিটার বসাননি, তাদেরকে প্রিপেইড মিটার বসানোর আহবান করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের বিলের কাগজ পৌঁছে দেয়ার জন্য আগে আমাদের যে জনবল ছিল, এখন প্রিপেইড মিটারের কারণে সেই জনবল নেই। জনবল কমে গেছে, বেশি জনবল রাখার সুযোগ নাই। কারণ তাদেরকে বেতন দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর ফলে কিছু ক্ষেত্রে হয়তো বিলের কাগজ পৌঁছাতে একটু বিলম্ব হচ্ছে।’
এক মাসে কম বিল, আরেক মাসে বেশি বিল দেখানো বিষয়ে পারভেজ আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এটা আমার জানা নেই।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *