অনলাইন ডেস্ক:স্বাধীনতার পর থেকেই অগ্রগতি আর উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ । কয়েক দশক আগে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে এগিয়ে থাকা পাকিস্তানকে অনেক ক্ষেত্রেই পেছনে । রপ্তানি আয়ে সাফল্য বিস্ময়কর।
১৯৭২-৭৩ সালে ২৫টি পণ্য কয়েকটি দেশে রপ্তানি করে আয় করে ৩৪৮.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজ বিশ্বের প্রায় ১৯৯টি দেশে ৭৪৪টি পণ্য রপ্তানি করে আয় করছে সার্ভিস সেক্টরসহ ৩৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দুটি একটি দেশের স্বাধীনতা এবং অপরটি অর্থনৈতিক মুক্তি।
তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন। আর আজ তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সফলভাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
ডিজিটাল মধ্য আয়ের বাংলাদেশ গঠনের মধ্যদিয়ে ভিশন-২০২১ সফল করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণ হবে।
বাংলাদেশ আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
সার্ভিস সেক্টর বাদে গত বছর প্রায় ৩৪.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি করেছে। এ বছর ৩৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রপ্তানি আয়ে এ ধরনের উন্নতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের শুরুতে আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে আমদানির বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন এবং অনুসরণের নীতি গ্রহণ করে। ১৯৯০-এর দশকে বাস্তবায়িত আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির ফলে দেশের বাণিজ্যনীতিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাময়িক ব্যবস্থাবলির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ফলে উচ্চতর রপ্তানি সম্ভাবনাময় উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত হতো। আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার ১৯৯৩ সালে ২ বছর মেয়াদি রপ্তানি নীতিমালা ঘোষণা করে। এ রপ্তানি নীতিমালায় দেশের রপ্তানি ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রপ্তানিকারকদের জন্য বেশকিছু সুবিধা দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৭-২০০২ সময়ের জন্য একটি ৫ বছর মেয়াদি রপ্তানিনীতি ঘোষণা করা হয়। এ নতুন নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী দেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পকারখানা স্থাপন এবং সকল শিল্পের পশ্চাদন্বয়ী শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করা। উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির পার্থক্য তথা বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনাই ছিল রপ্তানিনীতির লক্ষ্য।
১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রাথমিক পণ্য থেকে তৈরি পণ্যে স্থানান্তর করে। এ ছাড়া প্রচলিত পণ্যের চেয়ে অপ্রচলিত পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানির প্রতিও তারা অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে।
রপ্তানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারকদের সরকারিভাবে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে পরিশোধিত শুল্ক প্রত্যর্পণ সুবিধা, কর রেয়াত, শুল্কাধীন পণ্যাগার, আয়কর রেয়াত, অপেক্ষাকৃত কম সুদহারে রপ্তানিকারকদের ঋণদান, রপ্তানিকারক কর্তৃক অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল পরিচালনা এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম উল্লেখযোগ্য।
২০০০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি গড়ে ২০ ভাগের মতো। সরকার রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা দিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে রপ্তানিকারক, বিশেষ করে নতুন রপ্তানিকারকদের রাজস্ব সহায়তা দান এবং নতুন প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠা উল্লেখযোগ্য। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সময়কালের জন্য একটি নতুন রপ্তানিনীতিমালা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। গত দশকে জিএসপি সংকটের কারণে রপ্তানি খাতে সৃষ্ট কিছুটা অচলাবস্থা এবং বিশ্ব আর্থিক সংকট সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সুস্থ ধারায় ছিল। সর্বশেষ ২০১৫-১৮ সময়কালের জন্য রপ্তানিনীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। রপ্তানিনীতিতে রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, সহজ ও স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা, চটগ্রাম ও মোংলা বন্দরকে আধুনিকায়নসহ বেশকিছু নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমন নীতিমালার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
তিনি বলেন,
রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন,
রপ্তানি আয়ে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। তবে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বিরাট ধকল গেছে। সেটি কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারের নীতি সহায়তা এবং প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে এবং নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই রপ্তানি খাত এগিয়ে চলছে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা এবং সরকারের সহায়তায় এটি অর্জন সম্ভব হয়েছে।