মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে জরুরি অবস্থা জারির পথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার মেক্সিকো সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে দেয়াল নির্মাণের অর্থায়নে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারির হুমকি দিয়েছেন তিনি।
সরকারের অচলাবস্থার ২১ দিনের মাথায় তার এ হুমকির পর পরই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে স্টিলের দেয়াল নির্মাণের সার্বিক প্রস্তুতি শুরু করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন।
এ ব্যাপারে কর্মতৎপর হয়ে উঠেছে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রশাসনও। দেয়াল নির্মাণ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নাটকীয়তার মধ্যেই দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে ইউএসএটুডে।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণাকালীন অন্যতম আশ্বাস ছিল মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ। মার্কিন জনগণের মনে অভিবাসী ভীতি ঢুকিয়ে তার ফায়দা তুলতে চাচ্ছেন তিনি। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই ট্রাম্পের এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিকরা। ডেমোক্রেটরা বলছে, মার্কিনিদের করের টাকায় ট্রাম্পের এ অনৈতিক দেয়াল নির্মাণ করতে দেয়া হবে না।
এজন্য কংগ্রেসকে এড়িয়েই দেয়াল নির্মাণে জরুরি অবস্থার পথে হাঁটতে চাচ্ছেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহেও একবার জরুরি অবস্থার হুমিক দেন তিনি। এরপর থেকেই সেই আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম টিভি ভাষণে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে সরে আসেন তিনি। পরদিন বুধবার শীর্ষ দুই ডেমোক্রেট নেতা ন্যান্সি পেলোসি ও চাক শুমারের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও কয়েক মিনিট পরই ‘ওয়াকআউট’ করেন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় অচলাবস্থা নিরসনের সম্ভাবনা। এর মধ্যেই নতুন করে জরুরি অবস্থা ঘোষণার হুমকি দিলেন ট্রাম্প। মেক্সিকো সীমান্ত থেকে তিনি বলেন, ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার সম্পূর্ণ অধিকার আমার রয়েছে।’
হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অচলাবস্থা নিরসনে ফের ডেমোক্রেট নেতাদের সঙ্গে বসবেন প্রেসিডেন্ট। দেয়াল নির্মাণ ইস্যুতে আলোচনা যদি আবারও ব্যর্থ হয় অর্থাৎ প্রস্তাবিত ৫৭০ কোটি ডলার না পান তাহলে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করবেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বস্তুত যুদ্ধাবস্থায় এ ধরনের নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের অধিকার মার্কিন প্রেসিডেন্টের রয়েছে।
এক্ষেত্রে দক্ষিণ সীমান্তেই জরুরি অবস্থা জারি করবেন তিনি। এর ফলে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়াররাই দেয়ালের নকশা ও অর্থায়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করার অনুমোদন পাবেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘কংগ্রেস তহবিল অনুমোদন না করলে দেয়ালে অর্থায়নের বহু উৎস পেন্টাগনের রয়েছে।’
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পরই দেয়াল নির্মাণে প্রস্তুতি শুরু করেছে পেন্টাগন। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নৌবাহিনী ক্যাপ্টেন বিল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সীমান্ত দেয়াল নির্মাণের বিভিন্ন উপায় চিহ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বিভাগ অর্থায়ন প্রক্রিয়া বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু জরুরি অবস্থা এখনও ঘোষণা হয়নি, সুতরাং এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
তবে ট্রাম্প বৃহস্পতিবারই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘জরুরি অবস্থা যে কোনো সময়ই ঘটতে পারে।’ অচলাবস্থা ও দেয়াল নির্মাণ ঘিরে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২২ জানুয়ারি থেকে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে হতে যাওয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান