নির্বাচনী দৌড়ে মহাজোট-ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের পেছনে ফেলে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে ফলাফলে মূল লড়াইয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ঘরনার দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘সিংহ’ প্রতিকের অধ্যক্ষ ডক্টর এনামুল হক সরদার ও ‘ডাব’ প্রতিকের মুহিবুর রহমান। নির্বাচনের শেষ দিকে এসে ‘বিএনপি-জামায়াতের’ আনুষ্ঠানিক সমর্থন আদায় করে মূল আলোচনায় চলে এসেছেন ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান (প্রতিক- উদীয়মান সূর্য)। প্রতিক বরাদ্ধের পর থেকেই মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের চেয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এখন পর্যন্ত অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ঘরণার দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রব মল্লিক। এছাড়া নির্বাচনী মাঠের জোয়ার-ভাটার খেলায় জনতার আলোচনায় রয়েছেন খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী দেওয়াল ঘড়ি প্রতিকের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী এবং মহাজোট ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী লাঙ্গল প্রতিকের ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। এনিয়ে টানা দু’বারের নির্বাচনে নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থী না থাকায় সিলেট-২ আসনে নির্বাচনী আমেজ নেই বললেই চলে। প্রতিক বরাদ্ধের পর এআসনে নৌকা না থাকলেও ধানের শীষের প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী মাঠ ছিল অনেকটা সরব। কিন্তু পরবর্তীতে মহাজোট প্রার্থী এহিয়া চৌধুরীর রিটের প্রেক্ষিতে ধানের শীষের প্রার্থী ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায়র সাথে সাথে এআসন থেকে হারিয়ে যায় নির্বাচনী আমেজও। বিগত ৫ বছর আওয়ামী লীগের সাথে থাকা দূরত্বে ও নানান বিতর্কিত কারণে প্রচার-প্রচারণায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন মহাজোট প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। তবে মঙ্গলবার রাতে এহিয়ার সমর্থনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভা ও বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে বিএনপি-জামায়াতের আনুষ্ঠানিক সমর্থনের পর কিছুটা হলেও জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। নিজেদের দলের মনোনীত প্রার্থী কিংবা প্রতিক না থাকার কারণে সিলেট-২ আসনের আওয়ামী লীগ-বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যেমন একাধিক বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, তেমনি এআসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত তথা মহাজোট প্রার্থী থাকার পরও জাতীয় পার্টিতে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। ফলে এবারের নির্বাচনের ফলাফলে আঞ্চলিকতা হতে পারে বড় একটি ফ্যাক্টর। আবার প্রত্যেক দলের বিভক্তিতে সমর্থনের পাল্লা ভারী হচ্ছে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সিংহ প্রতিকের অধ্যক্ষ ডক্টর এনামুল হক সরদার ও ডাব প্রতিকের মুহিবুর রহমান’র। তবে জামায়াতের রিজার্ভ ভোটের কারণে নিরবেই সরব হয়ে উঠেছে উদীয়মান সূর্য প্রতিকে মোকাব্বির খানের পাল্লা। আবার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের একটি বড় অংশ অধ্যক্ষ ডক্টর এনামুল হক সরদারের পক্ষে নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। এদিকে ধর্মভিত্তিক দলের প্রার্থী হওয়ায় জনতার হিসাবের খাতায় রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখ প্রতিকের মাওলানা মুহাম্মদ আমির উদ্দিন’র নামও। অন্যদিকে প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে ও জনসমর্থন আদায়ে প্রায় ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) মনোনীত টেলিভিশন প্রতিকের মোশাহিদ খান ও ন্যাশনাল পিপুলস পার্টি মনোনীত আম প্রতিকের মনোয়ার হোসেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিভক্ত হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশটি স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সরদারের ‘সিংহ’ প্রতিক এবং অপর অংশগুলো আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের ‘ডাব’ ও মহাজোট প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়ার ‘লাঙ্গল’ প্রতিকের সমর্থনে নির্বাচনী ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। বিভক্তির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের চেয়েও লাজুক অবস্থা বিএনপিতে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বড় অংশটি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মোকাব্বির খানের ‘উদীয়মান সূর্য’ এবং অপর অংশগুলোর মধ্যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সরদারের ‘সিংহ’ প্রতিক, কেউ আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানের ‘ডাব’ প্রতিক ও কেউ কেউ আবার নিজেদের দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ওসমানীনগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আবদুর রব মল্লিকের ‘মোটরগাড়ী (কার)’ প্রতিকের সমর্থনে ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। বিভক্তি ছাড়া যেন চলছে না জাতীয় পার্টিও। তাই বিভক্ত জাতীয় পার্টির বড় অংশটি লাঙ্গনের পক্ষে থাকলেও বিভিন্ন কারণে একটি অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমানকে। আবার ভিতরে ভিতরে লাঙ্গনের পক্ষে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের আরেকটি অংশ ভোটের মাঠের খোঁজ খবর নিয়ে অধ্যক্ষ ডক্টর এনামুল হক সরদারের সাথে নিরবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। জানা গেছে, বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের ৪ বার এবং বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ৩ বার করে নিজেদের দলের প্রার্থীকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করতে পেরেছেন। অনেক তাৎপর্যপূর্ণ সিলেট-২ আসনের নির্বাচনী ফলাফলে প্রচলিত ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে ৯১’র নির্বাচন থেকে শুরু করে সিলেট-২ আসনে ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি’ মনোনীন প্রার্থীরা দু’বার করে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে কোন দল বা দলের প্রার্থীই পর পর দুবার নির্বাচিত হতে পারেননি। এবারের নির্বাচনে দেখার বিষয় ওই ধারা অব্যাহত থাকে নাকি ভেঙ্গে নতুন কোন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। আর সেজন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বের পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে থাকা ১৬টি ইউনিয়নের ১৪৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে ভোটার হচ্ছেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৫২ জন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দুই উপজেলার ভোটাররা ১২৭টি ভোট কেন্দ্রের ৬১৪টি ভোট কক্ষে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত করবেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে। যিনি নির্বাচিত হয়ে আগামী ৫ বছর ওই নির্বাচনী আসনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দায়িত্ব পালন করবেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে।
বার্তা বিভাগ প্রধান