Home » গ্রহাণু বা অ্যাস্টরয়েড হলো পাথর দ্বারা

গ্রহাণু বা অ্যাস্টরয়েড হলো পাথর দ্বারা

গ্রহাণু বা অ্যাস্টরয়েড হলো পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু যা নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। এদের আকার সাধারণত ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধের থেকেও কম হয়। কিন্তু মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ানো ‘বেন্নু’ নামের একটি ঘাতক গ্রহাণুকে নিয়ে খুবই চিন্তিত নাসার বিজ্ঞানীরা। প্রতি ৬ বছর অন্তর পৃথিবীর কক্ষপথের কাছ ঘেঁষে বেরিয়ে যায় এ ‘বেন্নু’। প্রতিবারই একটু একটু করে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে এ গ্রহাণুটি। আর ২১৩৫ সাল নাগাদ গ্রহাণুটি ঢুকে পড়বে পৃথিবী আর চাঁদের মাঝামাঝি একটি জায়গায়। এভাবে পৃথিবীর কাছে আসতে থাকলে দেড়শ কী পৌনে দুশ বছরের মধ্যে বেন্নুর পৃথিবীর উপর আছড়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সেই আশঙ্কা থেকে বেন্নু সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানতে কয়েক বিজ্ঞানী পাঠিয়ে ছিলেন মহাকাশযান ‘ওসিরিস-রেক্স’কে। সেই বেন্নুতে পৌঁছে মাত্র ১০ দিনের মাথায় ওসিরিক-রেক্স জানাল বেন্নুতে নাকি অনেক পানি রয়েছে।

এ বছর উৎক্ষেপণের পর ১৪ লাখ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রহাণুটির ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২ মাইল উপরে ঢুকে পড়ে গোয়েন্দা মহাকাশযান ‘ওসিরিস-রেক্স’। সেখান থেকে পাঠানো বিভিন্ন তথ্য ও ছবি বিশ্লেষণ করেই ওই গ্রহাণুতে পানির অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। ‘ওসিরিস-রেক্স’-এর মধ্যে রয়েছে দুটি সর্বাধুনিক স্পেক্ট্রোমিটার। একটি ‘ওসিরিস-রেক্স ভিসিবল অ্যান্ড ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোমিটার’। অন্যটি ‘ওসিরিস-রেক্স থার্মাল এমিসন স্পেক্ট্রোমিটার’। ওই দুই স্পেক্ট্রোমিটারের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে বেন্নুর মধ্যে হাইড্রক্সিল আয়নের উপস্থিতির কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। পানির অণু ভাঙলে তৈরি হয় হাইড্রোজেন ও হাইড্রক্সিল আয়ন। তাই বেন্নুতে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রিক্সল আয়নের হদিশ মেলায় পানির অস্তিত্বই প্রমাণিত হলো। বিজ্ঞানীদের ধারণা, যে মহাজাগতিক বস্তু থেকে বেন্নুর জন্ম হয়েছিল, সেখানে পানি ছিল তরল অবস্থায়।

নাসার বিজ্ঞানী অ্যামি সিমন বলেছেন, বেন্নুর পিঠের প্রায় সর্বত্রই হাইড্রেটেড খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে; যা প্রমাণ করে এ গ্রহাণু সৌরজগতের শিশু বয়সে (৫৫০ কোটি বছর আগে) তৈরি হয়েছিল। এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে, বেন্নু থেকে খনিজের নমুনা নিয়ে ওসিরিস-রেক্স পৃথিবীতে ফিরে এলে।

আগামী দু’বছর ধরে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে করতে নাসার মহাকাশযানটি উড়ে যাবে গ্রহাণুর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং বিষুবরেখা ও তার লাগোয়া এলাকাগুলোর উপর দিয়ে। তারপর সেখান থেকে মাটি তুলে আনতে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় বেন্নুতে নামবে ওসিরিস-রেক্স। সেই মাটি নিয়ে নাসার মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরবে ২০২৩ সালে। বেন্নুর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করার সময় গ্রহাণুটির ভর মাপবে নাসার এ গোয়েন্দা মহাকাশযানটি। কতটা জোরে বেন্নু নিজের চারপাশে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটাও মেপে দেখা হবে। বহু দূরে থাকা বেন্নুর চেহারাটা আদতে ঠিক কী রকম, সে কতটা ভারী সে সব তথ্য ধীরে ধীরে সামনে আসবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। মূলত বেন্নুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতেই পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত করা হয়েছিল এ ‘ওসিরিস রেক্স’কে।—আনন্দবাজার

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *