মুম্বইয়ের হিরে ব্যবসায়ী রাজেশ্বর উদানিকে খুনের ঘটনায় জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী দেবলীনা ভট্টাচার্যকে আটক করল মুম্বই পুলিশ। জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘সাথ নিভানা সাথিয়া’-র জন্য বিখ্যাত এই অভিনেত্রীকে এর আগে এই খুনের তদন্তে জেরাও করা হয়েছিল। মুম্বইয়ের পন্থনগর থানার পুলিশ আটক করেছে দেবলীনা ভট্টাচার্যকে, যাঁকে অনেকে চেনেন ‘গোপী বহু’ নামেও। এই খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে মহারাষ্ট্র বিজেপির প্রাক্তন নেতা রমেশ পওয়ারকেও।
শনিবার দিনভর মুম্বইয়ের ঘাটকোপরে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় দেবলীনা এবং রমেশ পাওয়ারকে। তিন দিন আগে সংলগ্ন রায়গড় জেলার জঙ্গলে মিলেছিলনিখোঁজ হিরে ব্যবসায়ী রাজেশ্বর উদানির পচা গলা মৃতদেহ। এই খুনে দেবলীনার কী ভূমিকা ছিল, তা নিয়ে পুলিশ মুখ না খুললেও বিনোদন জগতের আরও অনেকে এই খুনের সঙ্গে জড়িত, সেই ইঙ্গিত দিয়েছে মুম্বই পুলিশ।
সে ক্ষেত্রে আগামী দিনে তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে আরও বেশ কিছু গ্রেফতারির সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
২৮ নভেম্বর মু্ম্বই থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান ৫৭ বছর বয়সী হিরে ব্যবসায়ী রাজেশ্বর উদানি। পরিবারের কাছ থেকে এই কথা জানতে পেরে তাঁর খোঁজে নামে মুম্বই পুলিশ। ফোন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে, সিগনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো তাঁর মোবাইল কাজ করেছিল নভি মু্ম্বই এলাকায়। এক সপ্তাহ পরেও তাঁর কোনও খোঁজ না মেলায় পরিবারের লোকের সন্দেহের ভিত্তিতে অপহরণের মামলা দায়ের করে পুলিশ। হিরে ব্যবসায়ীর গাড়ির চালককে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, পন্থনগর এলাকায় সে ‘ড্রপ’ করেছিল উদানিকে। তার পরঅন্য একটি গাড়ি এসে তুলে নেয় তাঁকে।
৫ ডিসেম্বর রায়গড়ের জঙ্গলে মেলে উদানির পচা গলা মৃতদেহ। যদিও সেই দেহ দেখে চেনার উপায় ছিল না। ছেঁড়া জামাকাপড় ও জুতো দেখে উদানিকে সনাক্ত করেন তাঁর ছেলে। পুলিশের সন্দেহ, অন্য কোথাও খুন করার পর উদানির মৃতদেহ জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
উদানির ফোনের রেকর্ড দেখে পুলিশ জানতে পারে, বিনোদন ও গ্ল্যামার জগতের বেশ কিছু মহিলার সঙ্গে তাঁর ‘সখ্য’ ছিল। তাঁদের সঙ্গে মুম্বইয়ের বিভিন্ন বারে নিয়মিত যাতায়াতও ছিল এই হিরে ব্যবসায়ীর। সেই সূত্র ধরেই পুলিস খোঁজ পায় প্রাক্তন বিজেপি নেতা রমেশ পওয়ারের, যিনি আবার মহারাষ্ট্রের আবাসন মন্ত্রী ও মুম্বই বিজেপি প্রধান প্রকাশ মেহতার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী। রমেশ পওয়ারকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
হাই প্রোফাইল এই খুনের মামলায় জেরা করা হয়েছে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী প্রকাশ মেহতাকেও। রমেশের সঙ্গে তাঁর এক সময়েরসম্পর্কের কথা স্বীকার করলেওসম্প্রতি কোনও যোগাযোগ ছিল না বলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন।
কী কারণে এই খুন তা জানা না গেলেও অর্থ এবং নারী, এই দু’টি বিষয়ই জড়িত থাকতে পারে বলে অনুমান মুম্বই পুলিশের। রমেশ পওয়ারের সঙ্গে উদানির আর্থিক ঝামেলা চলছিল। পাশাপাশি রমেশের পছন্দের নারীকে উদানির কুপ্রস্তাব দেওয়া নিয়েও তাঁদের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল বলে জানা গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তে। খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’ডজন সন্দেহভাজনকে জেরা করা হয়েছে। যদিও রমেশ একা নয়, তাঁর সঙ্গে বিনোদন জগতের আরও বেশ কিছু রাঘব বোয়াল জড়িত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মুম্বই পুলিশ।
নির্বাহী সম্পাদক