Home » কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে এবারও ধরা পড়ছে মা ইলিশ

কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে এবারও ধরা পড়ছে মা ইলিশ

কুড়িগ্রামের নদ-নদীতে এবারও ধরা পড়ছে মা ইলিশ। তবে গত বছরের তুলনায় জেলায় ইলিশের আমদানি কম হলেও ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

দেশের বৃহত্তম উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রামে রয়েছে ছোট-বড় ১৬ নদী। ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর, ধরলা ও তিস্তা নদীতে এতদিন ইলিশের আবির্ভাব দেখা না গেলেও গত দু’বছর থেকে এখানে ইলিশের বিচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পদ্মা-যমুনা ব্রহ্মপুত্র হয়ে ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতের আসাম রাজ্যে। কিন্তু ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন পয়েন্টে গোপনে শত শত মণ ইলিশ ধরে তা বিক্রি করছেন জেলেরা। প্রকাশ্যে বিক্রি করতে না পারলেও গোপনে ইলিশের বাণিজ্য চলছে কয়েক লাখ টাকার। তাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ইলিশের সংখ্যা কমে যাওয়ার আশংকা স্থানীয় জেলেদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে অনন্তপুর, বাগুয়াতে প্রায় শতাধিক ডিঙ্গি নৌকায় কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন জেলেরা। এছাড়াও সদরের ব্রহ্মপুত্র নদের চর যাত্রাপুর, মোল্লারহাট, পোড়ারচর, চিলমারীর উপজেলার অস্টমির চর, রৌমারী উপজেলার ফুলুয়ারচর, খেয়ারচরসহ বিভিন্ন স্থানে জেলেরা অবাধ বিচরণ করছেন ইলিশ ধরতে।

হাতিয়ার জেলে পালন চন্দ্র দাস, নিপেন চন্দ্র, ভুবেন চন্দ্র, পোড়ার চরের মাঝি লাল চান, গোয়ালপুড়ি চরের মাঝি শহিদুল ইসলাম জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ইলিশ ধরা বন্ধ হয়নি। আমরা মাছ ধরা বন্ধ করে চলব কিভাবে সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না। তাই বাধ্য হয়েই সরকার নিষেধাজ্ঞা করে মাছ ধরতে হয়।

জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভোর এবং রাতে কারেন্ট জাল দিয়ে অনেক জেলে মাছ ধরছেন। এছাড়াও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনের বেলায় মাছ ধরা হয়।

তবে জেলেদের অভিযোগ, মাছ ধরার সময় প্রশাসনের অনেকেই এবং স্থানীয় কিছু প্রতারক এসে টাকা না দিয়েই ভয়ভীতি দেখিয়ে ইলিশ নিয়ে যায়।

চলতি মৌসুমে ইলিশ কম আসায় এবার তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। সারারাত মাছ ধরলে ১০/২০ কেজি পর্যন্ত ওঠে আর দিনের বেলায় এর সংখ্যা কমে ৫/১০ কেজি পর্যন্ত হয়। নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই ইলিশের কেজি ছিল ২৫০ টাকা। আর বর্তমানে এর দাম বেড়ে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এর দাম আরও বেড়ে যাবে বলে জানা গেছে।

 

মোল্লারহাটের নৌকার মাঝি ছালাম মিয়া বলেন, মোটরমাইকেলযোগে শত শত ক্রেতা এসে মোল্লারহাট থেকে বস্তায় করে ইলিশ নিয়ে যাচ্ছে। এখানে গড়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০টি ডিঙ্গি নৌকা মাছ ধরছে।

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ১২শ জেলে পরিবার রয়েছে। তারা নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন কোনো সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় গোপনে ইলিশ ধরছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, চলতি বছর কুড়িগ্রামকে ইলিশ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে অভিযান পরিচালনার জন্য।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় মৎস্য বিভাগ ৮টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছে। এ সময় ৪৭ কেজি ইলিশ জব্দ ও ৫৬ হাজার ৮শ মিটার কারেন্ট জাল নষ্ট করা হয় যার আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। জেলায় কার্ডধারী জেলের সংখ্যা রয়েছে ১৭ হাজার ৬৪৩ জন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *