ম্যাচের তখন ৭৪ মিনিট। শাদি শাবানের কর্ণার কিক থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে তাজিকিস্তানের জাল কাঁপালেন আব্দুল লতিফ আলবাহাদারি। হাসতে হাসতে সাইড বেঞ্চে বসে থাকা কারো উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলছিলেন ফিলিস্তিনের কোচ। কী বলছিলেন, শোনা যায়নি। তবে অনুমান করে নেয়া যায়, তাঁর বলা কথা হয়তো এরকম কিছুই ছিল, ‘আমরা ম্যাচটা জিতে যাচ্ছি!’
ম্যাচের তখন যে অবস্থা, তাতে ফিলিস্তিন কোচ হাসতে হাসতে জয়ের কথা বলতেই পারেন। ৭৪ মিনিটে দলনায়ক আব্দুল লতিফের ওই গোলের আগে যে জোনাথন জোরিলা আরেকটি গোল করে ফিলিস্তিনকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তাও ম্যাচ শুরুর মাত্র ৩৩ সেকেন্ডে! এই দু’জনের গোলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তাজিকিস্তানকে ২-০ গোলে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপে জয়যাত্রার সূচনা করেছে কাগজে-কলজে এবারের আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ফিলিস্তিন।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ফিলিস্তিনের অবস্থান ঠিক ১০০-তে। তাজিকিস্তান আছে ১২০ এ। এবার টুর্নামেন্টেরই সবচেয়ে শক্তিশালী দল ফিলিস্তিন। তারা যে টপ ফেবারিট, তা বুঝাতে সময় নিল মাত্র ৩৩ সেকেন্ড। ম্যাচ শুরুর বাঁশি বেজে বল গড়িয়েছে মাত্র। কিছু বুঝে ওঠারও সময় পায়নি তাজিকিস্তান, এর মধ্যেই গোল! মাত্র ৩৩ সেকন্ডে প্লেসিং শটে গোল করে ফিলিস্তিনকে এগিয়ে দেনন জোনাথন জোরিলা।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টের এই পঞ্চম আসরে এখনো পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে দ্রুতগতির গোল।
ডি-বক্সের প্রান্ত বাঁ দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন ফিলিস্তিনের উদয় দাবাঘ। এরপর তাজিকিস্তানের ডিফেন্স চিরে বল দেন জোনাথন জোরিলাকে। প্লেসিং শটে গোল করতে ভুল হয়নি তার।
বঙ্গবন্ধু কাপের গ্রুপপর্বের চতুর্থ ম্যাচে লড়াই হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে। শুরু থেকেই গতিময় ফুটবল খেলেছে ফিলিস্তিন ও তাজিকিস্তান। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে কেঁপেছে উভয় দলের ডিফেন্স। ফিলিস্তিন যেখানে সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই গোল আদায় করে নিয়েছে, বিপরীতে ফিনিশিংয়ে গিয়ে আটকে গেছে তাজিকিস্তান।
ম্যাচের প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে তাজিকিস্তানের জোরাবয়েভ আমিরদেক বক্সের ডান প্রান্ত থেকে শট নিয়েছিলেন। তবে লক্ষ্যে থাকেনি বল। ৪৭ মিনিটে ফিলিস্তিন গোলরক্ষকের পা আটকে দেয় তাজিকিস্তানকে। বক্সে ইরাগাশেভ জাহঙ্গীরের হেড গোলরক্ষকের পায়ে লেগে ফিরে আসে।
ম্যাচের ৫৩ মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক বাইরে থেকে জোনাথন জোরিলার জোরালো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে দেন তাজিক গোলরক্ষক রিজোয়েভ রুস্তম। পরের মিনিটে বক্সে দৌড়ের মধ্যে বল পেয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়েও টোকা দিতে পারেননি তাজিকিস্তানের ইরগাশেভ জাহঙ্গীর।
পিছিয়ে পড়া তাজিকিস্তান আক্রমণের ধার বাড়াতে মিডফিল্ডার আব্দুগফফ্রভকে তুলে মাঠে নামায় ফরোয়ার্ড তুরসানভ কমরনকে। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে মোহাম্মদ রহিমভের বাড়ানো বলে পোস্টের সামনে এক সারিতে থাকা ইরগাশেভ, জোরাবয়েভ ও ফাতখুল্লয়েভ ফাতখুল্ল মাথা বা পা ছোঁয়াতে পারেননি।
৭২ মিনিটে গোলরক্ষক রমি হামাদার উঁচু শটে মাথা ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন বদলি হিসেবে নামা খালেদ সালেম। বল পেয়ে বক্সে তাজিক গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন উদয় দাবাঘ। কিন্তু পোস্টে বল রাখতে পারেননি তিনি। ৮১ মিনিটে আব্দুল্লাহের বাড়ানো শটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও পা লাগাতে পারেননি খালেদ সালেম।
ম্যাচ শেষের কয়েক মিনিট আগে মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হন তাজিকিস্তানের কালান্দারভ বখতিয়র। অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল তাজিকিস্তান। আগামী শনিবার ফিলিস্তিন-নেপাল ম্যাচের দিকে তাই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে তাজিকদের। ওই ম্যাচে নেপাল হারলে তাজিকিস্তান সেমিফাইনালে পৌঁছে যাবে। ড্র হলেও চলবে তাজিকদের। কিন্তু নেপাল জিতে গেলে তখন আসবে গোল গড়ের হিসাব।
নির্বাহী সম্পাদক