বিবিসি থেকে পাওয়া:
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে বাংলাদেশে বাজারে কোনো ধরণের এনার্জি ড্রিংক থাকবে না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন এসব ড্রিংকসে ক্যাফেইনের মাত্রা অনেক বেশি। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং সেটা খাওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মাহাবুব কবির বলছিলেন, ‘এটা বাজারজাত, উৎপাদন করা যাবে না। প্রচার এবং বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না, এই বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় হবে।’
যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে এই ড্রিংকস তৈরি করে তারা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) কাছ কার্বোনেটেড বেভারেজের লাইসেন্স নিয়ে এই এনার্জি ড্রিংক তৈরি করে।
এই ড্রিংকস যাতে বন্ধ করা হয় সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কাস্টমসকে চিঠি দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, দুই বছর আগেই তারা এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন।
সেখানে তারা দেখেছেন সেক্সুয়ালি স্টিমুলেটিং ড্রাগ বা ভায়াগ্রার উপাদান তারা পেয়েছেন এই সব এনার্জি ড্রিংকসে। এছাড়া যে মাত্রায় ক্যাফেইন থাকার কথা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আছে।
মি. আহমেদ বলছিলেন যেহেতু এটা সরাসরি মাদক নিরাময় আইনের মধ্যে পরে না তাই তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবে এইসব ফাইন্ডিংগুলো তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।
অধিদফতরের আরেকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এই ড্রিংকসে অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। এবং সেটা দেশে উৎপাদিত এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা উভয় ড্রিংকসের মধ্যেই আছে।
কেন এনার্জি ড্রিংকস তুলে নিতে চাইছে কর্তৃপক্ষ?
– ড্রিংকসে ক্যাফেইনের মাত্রা অনেক বেশি
– ১৪৫ এমজি থাকার কথা থাকলেও সেখানে ৩২০ এসেক্সসুয়ালি স্টিমুলেটিং ড্রাগ বা ভায়াগ্রার উপাদান তারা পেয়েছেন এই সব এনার্জি ড্রিংকসে।
সূত্র: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বাংলাদশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
আরো পড়ুন :
এনার্জি ড্রিংকস কেন শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?
বিবিসি, ৩০ আগস্ট ২০১৮
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন দেশটিতে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাছে এনার্জি ড্রিংক বিক্রি নিষিদ্ধ হতে পারে। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-এমন উদ্বেগের মধ্যেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
শিশুদের কাছে এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি অবৈধ ঘোষণার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার এজন্য একটি গণ আলোচনার (পাবলিক কনসালটেশন) সূচনা করেছে।
কোন বয়স থেকে এটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত সে বিষয়ে মতামতও চাওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে দুটি বিকল্পও দেয়া হয়েছে- একটি হলো ১৬ বছর, অন্যটি ১৮।
স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলস নিজেরাই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে পারে।
এতো উদ্বেগের কারণ কি?
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্যের শিশু বা তরুণরাই বেশি এনার্জি ড্রিংকস পান করে থাকে।
এসব পানীয়তে উচ্চ মাত্রার সুগার ও ক্যাফেইন থাকে যার মাত্রা প্রায়শই দেখা যায় কোমল পানীয়তে থাকা এ ধরনের উপাদানের চেয়ে বেশি।
ফলে এ পানীয় বেশি মাত্রায় পান করলে শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরির ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ এ থেকে স্থূলতা, দাঁতের ক্ষয় রোগ, মাথাব্যথা ও ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শিক্ষক সংগঠনের জরিপ থেকে দেখা যায়, যেসব শিশুরা বেশি এনার্জি ড্রিংকস পান করে শ্রেণীকক্ষে তাদের আচরণ তুলনামূলক খারাপ।
এসব কারণেই প্রতি লিটারে ১৫০ মি.গ্রা. এর বেশি ক্যাফেইন আছেন এমন পানীয়র ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হতে পারে।
অনেক দোকান ইতোমধ্যেই নিজেরাই ১৬ বছরের কম বয়সীদের কাছে এ ধরণের পানীয় বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে শিশুরা চাইলে খুচরা বিক্রেতা ও ভেন্ডিং মেশিন থেকে কিনতে পারে।
দেশটির জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভ ব্রাইন বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এমন কিছু থেকে শিশুদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।’
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে শিশুদের স্থূলতাকে দেশের একটি বড় স্বাস্থ্য বিষয়ক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালোভাবে তাদের জীবন শুরুর জন্য আমরা কি করতে পারি সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমি সবাইকে তাদের মতামত দেয়ার জন্য উৎসাহিত করছি।’
কী থাকে এনার্জি ড্রিংকসে?
আগেই বলা হয়েছে, এতে উচ্চ মাত্রার সুগার ও ক্যাফেইন থাকে যার পরিমাণ হয় ২৫০ মিলি ক্যানে অন্তত ৮০ মি. গ্রা.। অথচ ৩৩০ মিলি’র একটি কোকাকোলা ক্যানে এর পরিমাণ থাকে ৩২ মি. গ্রা.।
কিছু ছোট ‘এনার্জি শট’-এ ৬০ মিলি বোতলে ১৬০ মি. গ্রা পর্যন্ত ক্যাফেইন থাকতে পারে।
অথচ বেশি মাত্রার ক্যাফেইন উদ্বেগ ও আতঙ্কিত হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এটি রক্তচাপও বাড়িয়ে দেয়।
গর্ভবতী কিংবা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন নারীদের দিনে দুশো মিগ্রার বেশি ক্যাফেইন না সেবন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সুগার কতটা ক্ষতি করতে পারে?
অতিরিক্ত সুগারের কারণে স্থূলতা, দাঁতের সমস্যা ছাড়াও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান নির্বাহী ডানকান সেলবি বলছেন, ‘শিশুদের স্থূলতা মোকাবেলায় এ ধরণের পানীয় বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ হবে দারুণ শক্তিশালী পদক্ষেপ।’
নির্বাহী সম্পাদক