Home » ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভের সন্তানের বিধান কী?

ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভের সন্তানের বিধান কী?

নিরাপরাধ ধর্ষিতা যেমন অবস্থার শিকার। তেমনি ধর্ষণের ফলে যদি গর্ভে সন্তান চলে আসে তবে সে সন্তানের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে ধর্ষণের শিকর নারী। গর্ভের সন্তান রাখবে নাকি অংকুরেই নষ্ট করে দেবে? এ ব্যাপারে রয়েছে ইসলামের কিছু দিক-নির্দেশনামূলক বর্ণনা-

ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভের সন্তানের শরীরে যদি রূহ চলে আসে, তবে সে সন্তান নষ্ট করা যাবে না। নষ্ট করা বৈধ হবে না। গর্ভের সন্তানের শরীরে রূহ আসে চার মাস পর। অর্থাৎ ১২০ দিন পর। আর এ অবস্থায় গর্ভের সন্তান নষ্ট করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কোনো যুক্তিতেই ৪ মাসের বেশি বয়সের গর্ভের সন্তান নষ্ট করা যাবে না।

কিন্তু যে নারী ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হয়েছেন কিন্তু গর্ভের সন্তানের শরীরে রূহ আসেনি, সে সন্তান রাখা কিংবা নষ্ট করা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

– কেউ কেউ মনে করেন, গর্ভের সন্তানের শরীরে রূহ না আসলে তা নষ্ট করে ফেলা বৈধ।
– আবার অনেকে মনে করেন, যে ধর্ষিতা নারীর গর্ভের সন্তানের শরীরে রূহ আসেনি, তা নষ্ট করা মাকরূহ।

একটি কথা মনে রাখতে হবে

কোনো ধর্ষিতা যদি কিশোরী হয় কিংবা এমন বয়সের হয় যে, পেটে সন্তান ধারণ করা কিংবা ভূমিষ্টের সময় জীবনাবসানের পর্যায়ে চলে যেতে পারে, সে অবস্থায় গর্ভের সন্তানের রূহ চলে আসলেও অর্থাৎ ৪ মাস হওয়ার পরও সে সন্তান নষ্ট করা যাবে।

বীর্জ থেকে গর্ভের সন্তানের শারীরিক আকৃতি ও রূহ আসা সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা গোশতপিন্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে।

অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার ‘আমল, তার রিয্ক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে না নেককার হবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়।’ (বুখারি)

এ হাদিস থেকে জানায় যে, ১২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর একজন ফেরেশতা মায়ের পেটের সন্তানের শরীরে রূহ ফুঁকে দেন।

সর্বোপরি কথা হলো

ধর্ষণের শিকার নারী যেহেতু নির্যাতিত; ধর্ষণের ফলে নারী সামাজিকভাবে হেয় কিংবা ছোট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই সার্বিক বিচেনায় গর্ভের সন্তানের বয়স ৪ মাস কিংবা ১২০ দিন অতিক্রম না করলে তা নষ্ট করা যেতে পারে। আর যদি কেউ রেখে দিতে চায়, তাও পারবে।

যখনই গর্ভের সন্তানের বয়স ৪ মাস কিংবা ১২০ দিন অতিবাহিত হবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সমস্যা না থাকলে তখন আর কোনোভাবেই গর্ভের সন্তান নষ্ট করা যাবে না।

ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যধি থেকে নারীসমাজকে নিরাপদ ও মুক্ত রাখতে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বোচ্চ সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। সব মহলের সচেতনা, সতর্কতা ও আইনের শাসনের বাস্তবায়নই ধর্ষণমুক্ত সমাজ উপহার দিতে পারে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *