Home » মিরপুর-১০ নম্বরের সেই বাড়ীতে মাটি ছাড়া কোনও বস্তুর অস্তিত্ব মেলেনি

মিরপুর-১০ নম্বরের সেই বাড়ীতে মাটি ছাড়া কোনও বস্তুর অস্তিত্ব মেলেনি

ডেস্ক নিউজ: দুটি ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’ (জিপিআর) স্ক্যানার দিয়ে দফায় দফায় তল্লাশি করার পরও মেলেনি কিছুই। কথিত গুপ্তধন তো নয়ই, মাটি ছাড়া সেখানে কোনও বস্তুরই অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি মিরপুর ১০ নম্বরের সেই বাড়িতে। খননের পর প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গুপ্তধন খোঁজার অভিযানটি সমাপ্ত করলো প্রশাসন। তবে আরও দুই-তিন দিন পর এর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির নিচে কিছু থাকলে স্ক্যানারের মনিটরে অস্তিত্ব দেখা যেত, অথবা সিগন্যাল পাওয়া যেত। মিরপুর-১০ নম্বরের সি-ব্লকের ‘আলোচিত’ বাড়িটিতে গুপ্তধন খোঁজার প্রথম দিনে ভেতরের দুটি কক্ষে সাড়ে চার ফুট মাটি খনন করা হয়। এতে গুপ্তধনের সন্ধান না পেয়ে সাময়িকভাবে অভিযান স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। এর ২৭ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে বুয়েট ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। এতেও গুপ্তধনের কোনও সন্ধান না পাওয়ায় অভিযানে ইতি টানে ঢাকা জেলা প্রশাসন। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে গুপ্তধন পরীক্ষা-নিরীক্ষার আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজোয়ার আকরাম। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা বুয়েট ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ও তাদের জিপিআর স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। দুই থেকে তিন ইঞ্চি পরিমাণ কোনও বস্তুও যদি মাটির নিচে থাকতো তবে জিপিআর স্ক্যানারে ধরা পড়তো। কিন্তু গুপ্তধন তো দূরের কথা, সেখানে আমরা কোনও বস্তুরই অস্তিত্ব পাইনি।’ বুয়েট-জাপান ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার প্রিভেনশন অ্যান্ড আরবান সেফটির (বুয়েট-জিদপাস) বিশেষজ্ঞ মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গুপ্তধনের তদন্ত করতে ঢাকা জেলা প্রশাসন আমাদের সহায়তা চেয়েছিল। আমরা গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর) স্ক্যানার দিয়ে সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) করেছি। মাটির নিচে যদি কোনও কিছু থেকে থাকে, তবে এই জিপিআর স্ক্যানারে সিগন্যাল পাওয়া যাবে। এখানে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘জিপিআর স্ক্যানারে পাওয়া ডাটা (উপাত্ত) কোডিং করে যেসব তথ্য পাওয়া যাবে, তার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তারাই এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করবে।’ এদিকে গুপ্তধনের অভিযান সমাপ্ত করার পর বাড়িটি মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। সেখান থেকে পুলিশি পাহারাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাড়ির মালিক মো. মনিরুল আলম  বলেন, ‘গুপ্তধনের বিষয়টি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, তা প্রমাণিত হয়েছে।’ বাড়ির ভেতরে খনন করা কক্ষগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। গত ২১ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরের সি-ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধনের খোঁজে খোঁড়াখুঁড়ি চালায় প্রশাসন। বাড়িটির মাটির নিচে কমপক্ষে দুই মণ সোনার গয়না আছে— এমন দাবি ওঠায় শুরু হয় এই অভিযান। ২০ জন শ্রমিক ছয় ঘণ্টা ধরে সাড়ে ৪ ফুট গভীর গর্ত করেন। তবে বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর দুর্বল হওয়ায় খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর ২২ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এর আগে গত ১০ জুলাই মোহাম্মদ আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তির একটি মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ১২ জুলাই রাতে কয়েকজন লোক বাড়ির ভেতরে গুপ্তধন আছে বলে জোরপূর্বক ঢোকার চেষ্টা করেন— এই মর্মে ১৪ জুলাই বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম থানায় জিডি করেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িটি খুঁড়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ২০১০ সালে সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বাড়িটি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্রয় করেন মনিরুল আলম।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *