সিরাজী এম আর মোস্তাক, ঢাকাঃ
ইসলামে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী কপট শ্রেণীভুক্ত। পবিত্র কোরানের ভাষায়, কপটদের স্থান হবে ভয়াবহ নরকের সর্বনি¤œ স্তরে। সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী জনাব আরিফুল হক চৌধুরী বিগত ২০১৩ সালে ওয়াদা করেছিলেন, পরবর্তীতে শরিকদল জামাতকে ছাড় দেয়ার।
জামাত সে ওয়াদা মনে রেখে, শুধু সিলেট ব্যতিত দেশের সকল সিটি নির্বাচনে বিএনপিকে সহযোগিতা করেছে। বিএনপি ওয়াদা ভঙ্গ করে জামাতের বিরূদ্ধে লড়ছে। তারা বলছে, রাজনীতিতে ওয়াদা মূল্যহীন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে সুস্পষ্ট ওয়াদা করেছিলেন, সকল কোটা বাতিল। আর কোটাই থাকবে না। এর কয়েকদিনের মধ্যে আবার বললেন, আদালতের নির্দেশনা থাকায় শতকরা ৩০ভাগ কোটায় হাত দেয়া যাবেনা। এভাবে ওয়াদা ভঙ্গ করে কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি কঠোর হলেন। কঠোরতার মাত্রা চুড়ান্ত করেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে প্রতিদিন নিরীহ মানুষদের বেপরোয়া হত্যা করছেন। এমনকি দেশের সর্বোচ্চ নিরাপদ স্থান তথা আদালত প্রাঙ্গনে মাহমুদুর রহমানের প্রতি অনাচারের নিকৃষ্ট পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। এটিই রাজনীতিতে ওয়াদার নমুনা।
রাজনৈতিক ওয়াদার প্রভাব দেশের ইতিহাসেও পড়ে। যেমন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পড়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালো রাতে হাজার হাজার বাঙ্গালি পাক হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে। সেদিন থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে এবং ২লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারীর ভাষণে বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত আত্মত্যাগীর সংখ্যা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন। পাক হানাদার বাহিনীই ছিল, আসল ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী। বঙ্গবন্ধু তাদের ১৯৫ সেনাকে মূল ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী চিহ্নিত করেছিলেন। লাখো বাঙ্গালির প্রাণের বিনিময়ে তিনি উক্ত ঘাতকদের ক্ষমা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতে তিনি দালাল আইনে প্রচলিত বিচারে শুধু বাংলাদেশের নাগরিকদের অভিযুক্ত করা অবৈধ মনে করেন। ফলে বিচার প্রক্রিয়া বাতিলসহ বিচারের সমস্ত কাগজপত্র তিনি নিজেই বিনষ্ট করেন, যেন আর কখনো প্রসঙ্গটি না আসে। ৪০ বছর পর সে ঐতিহাসিক ওয়াদা ভঙ্গ হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাকিস্তানিদের পরিবর্তে শুধু এদেশের কতিপয় নাগরিক ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত হয়েছে, ১৯৭১ এর ৩০ লাখ শহীদের ঘাতক ও ২লাখ নারীর ধর্ষক পাকিস্তানিরা নয়; বাংলাদেশীরাই তা করেছে। খোদ বাংলাদেশের বিচারকগণ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে পাকিস্তানিদের অপরাধ খুঁজে পাননি। এখন পাকিস্তানিদের যুদ্ধাপরাধী বলা, সুস্পষ্ট আদালত অবমাননার শামিল। এতে বাংলাদেশের ১৬ কোটি নাগরিককে ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম বলা যায়না। হয়তো পাকিস্তানিরাই মুক্তিযোদ্ধা বা বিজয়ী সাব্যস্ত হবে। এটি ঐতিহাসিক ওয়াদা ভঙ্গের নমুনা। এতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী প্রজন্ম হিসেবে বিশ্বের সর্বনিকৃষ্ট জাতি বা লান্থিত জাতিতে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং সবারই উচিত, ওয়াদা ভঙ্গের কৃষ্টি পরিহার করা। আরিফুল হকের উচিত, কৃত ওয়াদা নিয়ে জামাতের সাথে সমঝোতা করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উচিত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে দেশের ১৬ কোটি নাগরিককে মুক্তিযোদ্ধা ও লাখো শহীদের প্রজন্ম ঘোষণা করা। প্রচলিত ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা, প্রদত্ত ভাতা ও সকল কোটা বাতিল করা। বাংলাদেশিদের পরিবর্তে ১৯৭১ এর পাক হানাদার বাহিনীকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করা। বাংলাদেশের মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যুদ্ধাপরাধের কালিমা মুক্ত করা।
নির্বাহী সম্পাদক