ডেস্ক নিউজ: এক সপ্তাহ বাকি কোরবানির ঈদের। তবে এরই মধ্যে জমে উঠেছে নীলফামারীর কোরবানির পশুর হাটগুলো। এখনই হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ছে। সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে ভারতীয় গরুর আমদানি কম। এ কারণে হাটে দেশি গরু বেশি। তবে পর্যাপ্ত পশু থাকায় দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে বলে জানান ক্রেতারা। মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের মীরগঞ্জ হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের ক্রেতা আশরাফ আলী বলেন, ‘কয়েক দিনের তুলনায় আজ পশুর দাম সহনীয় পর্যায় রয়েছে। দেশি গরু প্রচুর আমদানি হয়েছে। ভারতীয় গরুর প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।’ একই এলাকার গরু বিক্রেতা আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার দুটি পোষা আড়িয়া গরু হাটে এনেছি। একেকটি গরু ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রেতারা দাম বলছেন। আশা করি এবারে লাভের মুখ দেখা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে দেশি গরুর সমাগম দেখে ক্রেতারা খুশি। এছাড়া দেশি গরুর রোগবালাই কম। দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপায়ে লালন-পালন করেন স্থানীয় খামারিরা। অন্যদিকে ভারতীয় গরুর নানা ধরনের রোগ বালাই থাকে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেশি।’ ৫৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন নীলফামারীর পরিচালক লে. কর্নেল কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এবার ভারতীয় গরু গতবারের তুলনায় একবারেই নগণ্য। অর্থাৎ নেই বললে চলে। তবে ভারতীয় গরু না আসা সবার জন্যই মঙ্গল। আমরা ঈদ উপলক্ষে সীমান্ত এলাকা কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। আশা করি ভারতীয় গরু ছাড়াই দেশি গরু দিয়ে কোরবানি হবে।’ তবে এবার হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি না হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামে বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাটের ইজারাদাররা। জেলার ঢেলাপীর, উত্তর বসুনিয়া, মীরগঞ্জ, বোড়াগাড়ী, জলঢাকা, বসুনিয়ার হাট, রামগঞ্জ হাট, টেঙ্গনমারী হাট, জলঢাকা হাট, বোড়াগাড়ী হাট, কলোনির হাটসহ বিভিন্ন পশুর হাটে প্রতিদিন গরু ছাগল কেনাবেচা চলছে। গরুর শাপাশি এসব হাটে ছাগলের আমদানিও প্রচুর। সূত্র জানায়, জেলার ডিমলায় একমাত্র ভারতীয় গরুর হাট ছিল কলোনি। কিন্তু এবার সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারি থাকায় করিডোরের মাধ্যমে সে হাটে গরু আসছে না। ফলে সীমান্তবর্তী কলোনি হাটে এবার ভারতীয় গরু নয়, দেশি গরুতে বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। এ হাটে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম ঘটে। এবার কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি গরুর জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি ৩৫০ টাকা করা হয়েছে। জেলার জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গনমারী হাটের ইজারাদার মঞ্জুরুল আলম সিয়াম বলেন, ‘ক্রেতার তিনশত টাকা ও বিক্রেতার ৫০ টাকা নির্ধারিত হারে ছাড়পত্রের টোল নেওয়া হয়েছে।’ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী বলেন, ‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলায় ৬১ হাজার ৬৯৯টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে।’ তিনি জানান, প্রস্তুতকৃত পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভী ৪৭ হাজার ৯৯৫টি এবং ছাগল ও ভেড়া ১৩ হাজার ৯০১টি। প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যমতে, জেলায় ষাঁড়, বলদ, গাভীর চাহিদা রয়েছে ৩৯ হাজার ৪টি, উদ্বৃত্ত রয়েছে ৮ হাজার ৭৪১টি। ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে ১০ হাজার ২২০টি, উদ্বৃত্ত রয়েছে তিন হাজার ৬৮১টি। জেলায় গরুর ১৭ হাজার ৬০০ জন, ছাগলের ৫ হাজার ৪৩০ জন এবং ভেড়ার ৬৩০ জন খামারি রয়েছেন। জেলায় মোট খামারি ২৩ হাজার ৬৬০ জন। সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সহিদুল ইসলাম জানান, ‘এবার কোরবানির ঈদে যে পরিমাণ সুস্থ পশু মজুত আছে তাতে কোরবানির পশু সংকটের কোনও আশঙ্কা নেই।’ তিনি আরও জানান, ঈদ উপলক্ষে উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে পশু সুস্থ আছে কিনা, তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে।