Home » তাওয়াফের প্রতি কদমে গোনাহ মাফ হয়

তাওয়াফের প্রতি কদমে গোনাহ মাফ হয়

পবিত্র হজ পালনের জন্য এখন যারা সৌদি আরবের মক্কা গমন করছেন, উমরা পালনের পর হজ শুরু হওয়া (৮ জিলহজ) পর্যন্ত তাদের আর বিশেষ কোনো আমল বা কাজ নেই। এ সময় ইহরামের কাপড় খুলে রেখে স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করে মক্কাবাসীদের মতো জীবন-যাপন করতে পারবেন। তবে হজের সফরে অহেতুক সময় নষ্ট করা কিছুতেই ঠিক না। এ সময় নিম্নোক্ত কাজগুলো গুরুত্বের সঙ্গে করা যেতে পারে-
নফল তাওয়াফ
যখনই সুযোগ পাওয়া যায় নফল তাওয়াফ করা। ফরজ তাওয়াফ যেভাবে আদায় করা হয়- একইভাবে নফল তাওয়াফ আদায় করতে হয়। তবে এতে বীরের মতো হাঁটা বা রমল নেই। আর ইহরামের কাপড় ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধে ফেলে রাখার আমল ইজতেবাও নেই। তাওয়াফের প্রতি কদমে কদমে গোনাহ মাফ করা হয়। তাই যতো বেশি সম্ভব তাওয়াফ আদায় করা। এক্ষেত্রে ৭টি চক্করে একটি তাওয়াফ হয়।”

এ তাওয়াফ নিজের জন্য করা যায়। অন্য কারো পক্ষ থেকে তাওয়াফ করা যায়। এটি নফল ইবাদত, তাই যার পক্ষ থেকে নিয়ত করে আদায় করা হবে তার পক্ষ থেকে আদায় হবে এবং সে সওয়াব পাবে। মা-বাবা, উস্তাদ, প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহু আনহুম যে কারো পক্ষ থেকে তা আদায় করা যেতে পারে।
কেউ কেউ বলেন, যতো বেশি পারো তাওয়াফ করে নাও। তোমার দেশে কাবা পাবে না। সেখানে নামাজ পড়তে পারবে, কিন্তু সেখানে তো তাওয়াফ করতে পারবে না।”
মসজিদে হারামে নামাজ আদায়
বায়তুল্লাহ শরীফে নামাজ আদায় করলে এক লক্ষ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। যা মক্কার অন্যকোনো মসজিদে কিংবা হোটেলে বা বাসায় পড়লে পাওয়া যাবে না। তাই মসজিদে হারাম একটু দূরে হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে হারামে এসে পড়ার চেষ্টা করা।
মসজিদে হারামে নফল নামাজ পড়ার চেষ্টা করা। কেননা এক লক্ষ গুণ সওয়াবের বিষয়টি মসজিদে হারামের ক্ষেত্রে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে এটি সীমাবদ্ধ নয়। তাই নফল পড়লেও এক লক্ষ গুণ সওয়াব পাওয়া যাবে। নামাজ কাযা থাকলে তাও আদায় করা যেতে পারে।
কাবা ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকা
কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে থাকাও ইবাদত। অন্যান্য ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে কিংবা অবসর পেলে কাবার দিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন। স্বাভাবিক অবস্থায়ও আবেগের সঙ্গে কাবার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন।
মুলতাযিমে দোয়া
কাবার চৌকাঠ বা দরজা ধরে দোয়া করা সুন্নত। হাজরে আসওয়াদ ও কাবার দরজার মাঝের জায়গাটুকু মুলতাযিম। এখানে দোয়া কবুল হয়। সুযোগ পেলেই সেখানে পৌঁছে নেক মাকসুদগুলো আল্লাহর কাছে চেয়ে নিতে পারেন। আল্লাহ আপনাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, আপনার তো চাইতে হবে! যা চাওয়ার চেয়ে নিন। সবচেয়ে বড় চাওয়া হেদায়েত। তা নিজের জন্য, সন্তানের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, উম্মাহর জন্য চেয়ে নিন। নিজস্ব প্রয়োজনগুলোও তুলে ধরুন ইলাহের দরবারে। দোয়া করার সময় কোন ভাষায় দোয়া করছেন তা দেখা হয় না। যে কোনো ভাষায়, যে কোনোভাবে দোয়া করা যায়। আল্লাহকে একান্তে পেয়েছেন, আপনার আকুতি জানাতে থাকুন। আমাদেরকেও আপনার দোয়ায় শামিল করে নিতে পারেন।
কোরআনে কারিম তেলাওয়াত
মসজিদে হারামে হাজার হাজার কোরআনে কারিম রাখা আছে। একটু পরপর সেলফে রাখা আছে এ সব কোরআন। আপনি সুযোগ পেলেই কোরআন তেলাওয়াত করতে ভুলবেন না। কোরআন খতমের টার্গেটে শুরু করলে ২/১ খতম পড়া হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ।
দোয়া করা
শুধু দোয়া করাও একটি ইবাদত। যে কোনো জায়গায় বসে, শুয়ে বা দাঁড়িয়ে হজের সফরে দোয়া করতে পারেন। যে কোনো ভাষায় দোয়া করা হোক আল্লাহ তাতে সাড়া দেন।
দ্বীনের প্রচার
ধর্মীয় বিষয় অন্য সাথীদের কাছে, কিংবা অন্য যে কোনো ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। অহেতুক গল্প-গুজব না করে, ঘুরাফেরা না করে ধর্মীয় বই পড়–ন, অন্যদেরকে পড়ে শুনান। হজের নিয়ম-কানুন আরো ভালো করে শিখুন বা অন্যকে শেখাতে চেষ্টা করুন।
নফল উমরা করা
হজের সফরে একাধিক উমরা করার কথা হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তার সাহাবীদের আমলে পাওয়া যায় না। তাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম নফল উমরা করাকে নিরুৎসাহিত করে থাকেন।
কেউ নফল উমরা করতে চাইলে তানঈম বা আয়শা মসজিদে গিয়ে উমরার ইহরাম বেঁধে এসে যথারীতি উমরা আদায় করতে পারেন। নফল উমরায় তাওয়াফের সময় রমল ও ইজতিবা করতে হয় না। অন্যান্য সকল কাজ উমরার মতোই।
মক্কার ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখা

উমরা ও হজের মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা হজের পর বাড়ী ফেরার পূর্বে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। এটি দেখায় আপনার অনেক অভিজ্ঞতা হবে। যেমন জাবালে নূরের হেরা গুহা। এতো উপরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে উঠতেন? হজরত খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা তার জন্য খাবার কিভাবে নিয়ে যেতেন? একাকী নবীজী কিভাবে সাধনা করতেন এসব বিষয় আপনার ভাবনায় আসবে। কোথায় কোথায় ঘুরতে যেতে পারেন, তা আপনার কাফেলার লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করলে অনেক কিছু জেনে নিতে পারবেন।”
অনেক সময় হজ কাফেলার পক্ষ থেকে মক্কা-মদিনার ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। যেতে পারেন তাদের সঙ্গেও। তবে মসজিদে হারামে এসে জোহরের নামাজ পড়তে ভুল করবেন না,

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *