মশাহিদ আহমদ (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নস্থিত সাধুহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহায়ক ফাহিমার অনৈতিক কর্মকান্ডে দু’টি সংসার ভেঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ৫টি জীবন। আর, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে অফিসে তার অসামাজিক কর্মকান্ডে সহায়তা করেছেন সাবেক একজন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং অসামাজিক কর্মকান্ড আশ্রয়-প্রশ্রয় ও ধামাচাপা দিয়ে সহায়তা করছেন তার পিতা বিডিআর (অবঃ) মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আহমদ। এ সংবাদ পরিবেশনকালে সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নস্থিত ফতেপুর গ্রামের মৃতঃ আব্দুল্লাহর পুত্র, আল মোবারাকা পরিবহনের সাবেক ড্রাইভার, ২ স্ত্রী ও ৮ বছর বয়সী ১ কন্যাসন্তানের জনক আব্দুল হামিদকে নিয়ে ফাহিমা জেলা সদরের ভাড়াবাসায় অবৈধভাবে একত্রে বসবাসরত। এ নিয়ে আব্দুল হামিদের ১ম স্ত্রী সদর উপজেলার ৫নং আখাইলকুরা ইউনিয়নস্থিত মিরপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার কন্যা শেলী বেগম গত ১২/০২/২০১৮ইং মৌলভীবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা (নং- পিটিশন ৭৮/২০১৮ইং) দায়ের করেছেন। এর আগে গত ১২/১২/২০১৭ইং শেলী বেগমের বড়ভাই আছাব মিয়া এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (নং- ৬৩৬) করেছিলেন। ফাহিমার বিয়ে হয় বিগত ১৯৯৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সিলেটের কাজী অফিসে প্রেমিক ও চাচাতো ভাই ইকবাল হোসেনের সাথে। কৈশোর থেকেই ফাহিমার বেপরোয়া চালচলন ও বেলেল্লাপনার কারণে ইকবালের পিতামাতা এ তাকে মেনে না নেয়ায় ইকবাল তার পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়। এক বন্ধুর সহায়তায় বাসাভাড়া করে ফাহিমাকে নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করে ইকবাল। ১ম সন্তানের জন্মের পর থেকে আবারও ফাহিমার অনৈতিক চালচলন শুরু। পরপুরুষদের সাথে সখ্যতা ও চলাফেরা তার রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়। স্বামী ইকবালের বাধা-আপত্তি ও সংশোধনের চেষ্টা সত্তেও, পিতামাতার আশ্রয়-প্রশয়ে ফাহিমা একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তার অনৈতিক চালচলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া দাম্পত্য কলহের জের ধরে ফাহিমা একদিকে, দিনের পর দিন নানাভাবে স্বামী ইকবালকে নির্যাতন এবং অপরদিকে, পরপুরুষদের সাথে সখ্যতা ও চলাফেরা অব্যাহত রাখে। একারণে চরম মানসিক বিপর্যস্ত অসহায় স্বামী ইকবাল হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত। এমতাবস্থায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারী হলে বয়স জালিয়াতি করে অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে হোসেন আহমদ মেয়ে ফাহিমার জন্য অফিস সহায়কের চাকুরী বাগিয়ে নেন। পিতা হোসেন আহমদ তার মেয়ে ফাহিমার প্রকৃত জন্মতারিখ পরিবর্তন করে চাকুরীর জন্য প্রযোজ্য জন্মতারিখ প্রতিস্থাপিত জন্মসনদ দিয়েই ফাহিমার চাকুরী চাকুরী বাগিয়ে নিয়েছেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পিতা বিডিআর হিসাবে ঢাকায় কর্মরত থাকাকালে ১৯৭৭ সালে ফাহিমার জন্ম হয়েছে। সে সিলেটের পাঠানটুলা বিডিআর স্কুলে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে পরবর্তীতে শেরপুরের আজাদ বখ্ত স্কুলে ৮ম শ্রেণীতে ভর্ত্তি হয়ে লেখাপড়া করেছে। তার বিয়ে হয়েছে ২১ বছর বয়সে বিগত ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালে। তার ১ম সন্তানের জন্ম হয়েছে বিয়ের ৩ বছর পর। সেই ১ম সন্তান এবারে এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র। সে অনুযায়ী চাকুরী গ্রহণকালে ফাহিমার প্রকৃত বয়স ছিল ৩৪-৩৫ বছর। সিলেটের পাঠানটুলা বিডিআর স্কুল ও শেরপুরের আজাদ বখ্ত স্কুলের ভর্ত্তি রেজিষ্টারে ফাহিমার তথ্য, ফাহিমার নিকাহনামা ও সর্বোপরী তার পিতা হোসেন আহমদের চাকুরীর ইতিহাস পরীক্ষা করলেই ফাহিমার বয়স জালিয়াতির বিষয়টি প্রমানীত হবে নিঃসন্দেহে। বয়স জালিয়াতি করে বিগত ২০১১ইং ফাহিমা চাকুরীতে যোগদান করে শহরের আরামবাগে এড. বাচ্চুর বাসা ভাড়া নিয়ে স্বপরিবাওে বসবাস শুরু করে। এসময় ফাহিমা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রায়ই অফিসের নাম করে সকাল ৮টায় বেরিয়ে গিয়ে রাত ৮/৯টা-১০টায় বাসায় ফিরতো। মাঝে মাঝে অপরিচিত লোককে সাথেকরে নিয়ে এসে বাসায় রাত্রিযাপন করতো। এসব বিষয় নিয়ে ফাহিমা ও ইকবালের মধ্যে ঝগড়াঝাটি-মারামারি দৈনন্দিন রুটিনকাজে পরিণত হয়। এছাড়াও, অজ্ঞাত কারণে বাসার কেয়ারটেকার মহিলার সাথে প্রায়ই ফাহিমার ঝগড়া হতো। প্রায় ৪ বছর এ বাসায় থাকাবস্থায় পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করে যে, একপর্যায়ে এ বাসা ত্যাগ করতে হয়। এসময় ইকবাল শহরের ডিএম টেইলার্সে কাটিং মাস্টার ছিল। এরপর তারা শহরের সুলতানপুরস্থ এখলাছুর রহমান ভবনের ২য় তলায় বাসাভাড়া নেয়। প্রায় দেড়বছর এখানে থাকাকালেও তাদের মধ্যে পরিস্থিতি ছিল একই রকম। এসময় ঝুনু মিয়া নামে ফেঞ্চুগঞ্জের এক যুবকের সাথে সম্পর্ক করে ফাহিমা। সখ্যতা করে সদর মডেল থানার সাবেক এসআই আমিনুলের সাথেও। ঝুনু মাঝে মাঝে ফাহিমার সাথে এসে বাসায় রাত্রিযাপন করতো। এই ঝুনুকে খালাতো ভাই পরিচয় বলে দিয়েছে সবার কাছে এমনকি স্বামী ইকবালের কাছেও। এই ঝুনুকে নিয়ে বিচারপ্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে ফাহিমার পিতা হোসেন আহমদ ও ইকবালের মধ্যে তুমূল বাকবিতন্ডা হয়। এর জের হিসাবে একদিন রাতে ইকবাল কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে ফাহিমা পুরাতন থানার পিছনে ৫/৬টি ইয়াবা টেবলেট দিয়ে এসআই আমিনুলের হাতে ইকবালকে ধরিয়ে দেয়। ২০১৫ সালের এ ঘটনার পর আরও একাধিকবার ফাহিমা এভাবে ইকবালকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে জেল খাটায়। একপর্যায়ে ফাহিমা সাধুহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী হয়ে ভাড়াবাসা ছেড়ে শেরপুরস্থ তার পিত্রালয়ে উঠে। এসময় ফাহিমা পরিচয় ও সখ্যতা গড়ে তোলে উক্ত হামিদের সাথে। হামিদ দুই বিবাহিত ও ৮ বছর বয়সী এক কন্যার জনক। ইতিপূর্বে ১ম স্ত্রী-কন্যা রেখেই সে শহরের বড়কাপন গ্রামের জহির উদ্দিনের কন্যা আছমা বেগমকে বিয়ে করে। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই সে ফাহিমার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায়। একজন চিহ্নিত মাদকসেবী, একাধিক মামলার আসামী হিসাবে হাজতবাসও করেছে একাধিকবার। হামিদের সাথে ফাহিমার পরিচয় ও সখ্যতা অল্পদিনের মধ্যেই অনৈতিক সম্পর্কে রুপ নেয়। সহকারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনকে ম্যানেজ করে অফিসেই চলে তাদের অনৈতিক অভিসার। এ নিয়ে চরম বিরোধের জের হিসাবে ফাহিমা কিছুদিনের মধ্যেই শহরের ধরকাপন এলাকায় ছোটবোন মাসুমার ভাড়াবাসায় পেয়িং গেস্ট হিসাবে উঠে হামিদের সাথে অনৈতিক অভিসার অব্যাহত রাখে। বিষয়টি টের পেয়ে আপত্তি জানালে ছোটবোন মাসুমা ও তার স্বামী রুজেল মিয়ার সাথে ফাহিমার বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে ঝগড়াঝাটি। এমতাবস্থায় মাসুমা একদিন ফাহিমার কাছে আসতে নিষেধ করায় হামিদ ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুমার গায়ে হাত তুলে। এ ঘটনার জের হিসাবে মাসুমার স্বামী রুজেল মিয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর ফাহিমার বিরুদ্ধে হামিদের সাথে অবৈধ মেলামেশার অভিযোগ করে। এর প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উভয়পক্ষকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করেন। এসময় সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের চেইনম্যান মনোরঞ্জন (বর্তমানে রাজনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে কর্মরত) ও সাধুহাটি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান (বর্তমানে শরিফপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তদন্তে ফাহিমার বিরুদ্ধে হামিদের সাথে অবৈধ মেলামেশার অভিযোগ প্রমানীত হলেও, ফাহিমার পিতা হোসেন আহমদ বলেন- হামিদ-ফাহিমার মেলামেশা অবৈধ নয়। তারা স্বামী-স্ত্রী। তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে। পিতার এ সাফাই স্বাক্ষ্যের কারণে ফাহিমা শাস্তির বদলে হামিদের সাথে অবৈধ মেলামেশার অলিখিত লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়। এরপর ফাহিমা পেয়িংগেস্ট ত্যাগ করে শহরেই বাসাভাড়া করে হামিদকে নিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে অদ্যাবধি। ফাহিমার স্বামী ইকবাল এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে ফাহিমার বক্তব্য নেয়ার জন্য সাধুহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে, ফাহিমা ও হামিদকে একত্রে অবস্থানরত পাওয়া যায়। জানতে চাইলে ফাহিমা ও হামিদ বিয়ের বিষয় অস্বীকার করে। সম্পর্কের বিষয় স্বীকার করে ফাহিমা জানায়- ইকবালকে আমি তালাক দিয়েছি। তাকে দেখানোর জন্যই হামিদকে বিয়ে করতে চেয়েছি। কিন্তু, হামিদ তার স্ত্রীর অনুমতিপত্র আনতে না পারায় বিয়ে করিনি। ফাহিমা ‘ইকবালকে তালাক দিয়েছি’ বললেও তালাক সংক্রান্ত কোন কাগজাত দেখাতে পারেনি। একই বক্তব্য দিয়েছে হামিদও। সাধুহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহায়ক জান্নাতুল ফেরদৌসী ফাহিমার বয়স জালিয়াতি করে চাকুরী গ্রহণ ও উল্লিখিত অনৈতিক কর্মকান্ড ‘সরকারী কর্মচারী শৃংখলা বিধি’ এর নগ্ন লংঘন। তাই, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তার স্বামী ইকবালসহ সচেতন মহল।