Home » আরিফুল হক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে -জামায়াত ও বিদ্রোহী প্রার্থী!

আরিফুল হক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে -জামায়াত ও বিদ্রোহী প্রার্থী!

পাঁচ বছর আগে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পেছনে হেফাজত ইস্যুর পাশাপাশি দলীয় বিভেদকেও দায়ী করা হয়েছিল। তবে এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে নেতা-কর্মীদের নজিরবিহীন ঐক্যের ওপর ভরসা রাখছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী কামরান।”

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার দলের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ও জোটের অংশীদার জামায়াতে ইসলামী পৃথকভাবে প্রার্থী দেওয়া। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, সিলেটের নগরপিতার আসনে এবার দলের প্রার্থীকেই দেখতে চান তারা। তারা বলেন, দলের প্রার্থীতে জয়ী করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ থাকলে পরাজয় নিশ্চিত, এটা আমরা গত নির্বাচনেই বুঝতে পেরেছি। তাই একই ভুল বারবার করা ঠিক হবে না। এবার যে ঐক্য সবার মধ্যে রয়েছে, এটা অতীতে কখনোই ছিল না। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও কামরানকে সর্বাত্মক সহযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।”

জানা গেছে, গত নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে এবারে দলীয় মনোনয়ন পেতে কামরানকে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। শেষ পর্যন্ত আসাদ দলের মনোনয়নবঞ্চিত হলেও প্রকাশ্যে কামরানের পক্ষে মাঠে নেমেছেন, যা কামরান শিবিরে স্বস্তি এনে দিয়েছে। আসাদ কামরানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বও পালন করছেন।”

গত নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আগের পরিস্থিতি এবার নেই। দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো সিটি নির্বাচন হচ্ছে। নৌকার পক্ষে এবার সব মান-অভিমান ভুলে নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। হেফাজতে ইসলাম তথা সিলেটের আলেম-ওলামারাও এবার নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে তারা ভোট দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করবেন ইনশা আল্লাহ।

জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সিকন্দর আলী বলেন, ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে আমরা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে আমরা পৃথকভাবে প্রচারপত্র বিলি, মতবিনিময় ও গণসংযোগ করছি। নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের এই প্রচারণা অব্যাহত থাকবে।”

এদিকে দলীয় বিভেদ কাটিয়ে উঠতে না পাড়ায় অনেকটাই বেকায়দায় আছেন বিএনপি প্রার্থী আরিফ। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রার্থী হয়েছেন মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত (প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কার করা হয়েছে) সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছেন। ২০১৩ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর ভোট ফলাফলে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

এবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান এসব ভোটে ভাগ বসানোর আশায় আছেন। সব কিছু মিলিয়ে বিএনপি প্রার্থী আরিফকে কঠিন সময় পাড় করতে হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনের শুরু থেকেই মনোনয়ন নিয়ে চাপে ছিলেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমসহ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ফলে রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে একই দিনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হলেও সিলেটে বিএনপি মেয়র প্রার্থীর নাম পরে ঘোষণা করা হয়।

এ ছাড়া অন্য দুটি সিটিতে ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন দিলেও সিলেটে মেয়র পদে আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অটল থাকে। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত না মানায় বদরুজ্জামান সেলিমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন দল বা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ধানের শীষের প্রতীকের ভোটে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন না।’ জোটের শরিক জামায়াত প্রার্থী দেওয়ায় ভোটের হিসাবে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন, ‘জামায়াত ছাড়া জোটের শরিক সব দল আমার সঙ্গে রয়েছে। প্রতিদিন তারা ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। জামায়াতের দলীয় ভোট নির্বাচনী ফলাফল নির্ধারণে কোনো ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী অনেক জনপ্রিয় একজন নেতা। তাকে হারানোর জন্যই সরকারদলীয় চক্রান্ত হিসেবে দুজন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর সঙ্গে ২০-দলীয় জোটেরও একক প্রার্থী থাকলে ভালো হতো বলে মনে করেন এই নেতা।”

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *