Home » চল্লিশ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেলেন নেদারল্যান্ডসের দুই বোন

চল্লিশ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেলেন নেদারল্যান্ডসের দুই বোন

নিউজ ডেস্ক: অবশেষে পরিবারের সন্ধান পেল নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারি সেই বাঙালি দুই বোন। শিকড়ের সন্ধানে সুদূর নেদারল্যান্ডস থেকে ছুটে এসে চল্লিশ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেলেন গফরগাঁওয়ের সাজেদা ও মল্লিকা। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শত শত মানুষ দুই বোনকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে উপজেলার খারুয়া মুকুন্দ গ্রামে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রাওনা ইউনিয়নের খারুয়া মুকুন্দ গ্রামের ইন্তাজ আলী-সমতা খাতুন দম্পতির দুই সন্তান সাজেদা ও মল্লিকা। সেই ১৯৭৮ সালের কথা। অভাবের সংসার। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারায় গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী একটি ট্রেনে দুই মেয়েকে তুলে দিয়ে ‘বিস্কুট ও চকলেট’ আনার কথা বলে চলে যান ইন্তাজ আলী। পরে ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশনে থামলে দুই শিশুর কান্না দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিভাবক না পাওয়ায় তাদের ট্র্রেন থেকে নামিয়ে দত্তপাড়ায় একটি মাতৃসদনে ভর্তি করে দেন।

১৯৮০ সালের দিকে নেদারল্যান্ডসের নিঃসন্তান দম্পতি এভার্ট বেকার ও মেরিয়ান্ট রেজল্যান্ড বাংলাদেশে এসে টঙ্গীর ওই মাতৃসদন থেকে শিশু মল্লিকাকে দত্তক নেন। পরে ওই দম্পতির মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের আরেকটি পরিবার মল্লিকার ছোট বোন সাজেদাকেও দত্তক নেয়। সেখানেই সাজেদা ও মল্লিকা বড় হয়। দত্তক নেওয়া পরিবার মল্লিকার নাম পরিবর্তন করে আনোয়ারা রাখে। পরিবারের কাছে তাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ জানতে পারলেও প্রকৃত আত্মপরিচয় জানতে পারেননি তারা। পরে দুই বোন একাধিকবার বাংলাদেশ ঘুরে গেলেও স্বজনের খোঁজ পাননি। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়।

এর সূত্র ধরে অনেকেই তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানের জন্য বিভিন্ন মিডিয়া ও ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর মধ্যে গফরগাঁও থেকে সাজেদা ও মল্লিকার স্বজনরাও যোগাযোগ করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সাজেদা ও মল্লিকার আসল পরিচয় মেলে।

সোমবার বিকেলে ইত্যাদির একটি টিমের সঙ্গে মল্লিকা স্বামী ও দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে খারুয়া মুকুন্দ গ্রামের মাতৃভিটায় যান। সেখানে ভাইবোন ও স্বজনের সঙ্গে দেখা করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। পরে বাবা-মার কবর জিয়ারত করেন। এ সময় পুরো বাড়িতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মল্লিকা বাংলা বলতে পারেন না। অভাবের তাড়না দুই বোনকে চল্লিশ বছর আগে বাবা-মা, ভাইবোন ও স্বজনের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল। এরপর বদলে দিয়েছে তাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি। কিন্তু এতটুকু কমেনি তাদের শিকড়ের টান। চল্লিশ বছর ধরে মা-বাবা, ভাইবোন ও স্বজনের খুঁজে বিরামহীন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তারা। অবশেষে সোমবার ভাইবোনের সন্ধান পেয়ে তাদের বুকে জড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন আনোয়ারা ওরফে মল্লিকা।

এর আগে মল্লিকার ভাই ছুতু মিয়া (৫৫) ও বোন ছুলেমান নেছার (৬০) ডিএনএ রিপোর্ট নেদারল্যান্ডসে পাঠানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হয় তাদের পরিচয়। এ খবর পেয়ে নেদারল্যান্ডস থেকে স্বামী থমাস, দুই কন্যাসহ বাংলাদেশে ছুটে আসেন মল্লিকা।

ভাঙা ভাঙা বাংলায় আনোয়ারা ওরফে মল্লিকা বলেন, মা-বাবার জন্য খারাপ লাগছে। তবে আমি আমার শিকড়ের সন্ধান পেয়েছি। অনেক খুশি আমি। ভাই ছুতু মিয়া বলেন, ‘বোনকে খুঁজে পেয়ে আমরাও অনেক খুশি।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি খুবই আবেগের। ফিল্মে দেখা যায় হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে বহু বছর পর ফিরে পেতে। কিন্তু বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেও পারিনি।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *