ডেস্ক নিউজ: তাইল্যান্ডের থাম লুয়াং ন্যাং নন গুহায় আটকে পড়া খুদে ফুটবলারদের এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সেই কাজেই এসেই প্রাণ হারালেন সামান কুনন (৩৮)। তিনি তাইল্যান্ড নেভি সিল-এর এক প্রাক্তন সেনা।
উদ্ধারকারীদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন সামান। ডাইভিংয়ে দক্ষ ওই প্রাক্তন নৌসেনা বৃহস্পতিবার ফুটবলারদের কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার জন্য গুহার ভিতরে ঢোকেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছেও দেন। কিন্তু বেরিয়ে আসার সময় গুহামুখ থেকে দু’কিলোমিটার ভিতরে সামানের দেহ উদ্ধার হয়। কী ভাবে মৃত্যু হল তাঁর, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে সামান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।
তাইল্যান্ডের সিল কম্যান্ডার আপাকর্ন ইয়ুকংকিউ বলেন, “আমরা এক জন সঙ্গীকে হারিয়েছি। কিন্তু এর জন্য উদ্ধারকাজ থেমে থাকবে না।” তিনি আরও জানান, গত দু’দিনে গুহা থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ জল পাম্প করে বের করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও এখনও যা জল রয়েছে, তা উদ্ধারকাজ চালানোর পক্ষে যথেষ্ট বেশি। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও যাতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত না হয় এবং ফুটবলারদের সুস্থ অবস্থায় বাইরে বার করে আনা যায়, সে দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়ুকংকিউ জানান, অভিজ্ঞ ডাইভারদের ক্ষেত্রেও গুহার ভিতরে গিয়ে উদ্ধারকাজ চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। আগামী সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাই অন্য কোনও ভাবে ফুটবলারদের উদ্ধার করা যায় কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নৌসেনারা কিশোর ফুটবলারদের ডাইভিং-এর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে তাঁরা কতটা সফল ভাবে বেরিয়ে আসতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান উদ্ধারকারীদের একাংশ।কারণ গুহার ভিতরে কিছু জায়গায় পথ এত সরু যে সেখান থেকে একাই বেরোতে হবে। ফলে এ ক্ষেত্রে অনেকটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।তা ছাড়া বেশ কয়েক দিন খাবারদাবার না পাওয়ায় যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছে ফুটবলাররা। নিখোঁজ হওয়ার দশ দিন পর তাদের হদিস পাওয়া গেলে খাবার এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু তাতেও ফুটবলাররা খুব একটা সতেজ হয়েছে বলে মনে করছেন না তাঁরা। ফুটবলারদের শারীরিক অবস্থার নজরদারির জন্য গুহার ভিতরেই এক জন চিকিৎসককে রাখা হয়েছে। রয়েছেন নেভি সিল-এর বেশ কয়েক জন উদ্ধারকারী।
গত ২৩ জুন ‘ওয়াইল্ড বোর’-এর ১২ জন খুদে ফুটবলার এবং তাদের কোচ থাম লুয়াং ন্যাং নন গুহায় ঢুকে নিখোঁজ হয়ে যায়। প্রায় দশ দিন গুহায় আটকে থাকার পর গত ৩ জুন তাদের খোঁজ মেলে।ওই দিন সকালে গুহার মধ্যে ঢুকতে সক্ষম হয় ব্রিটিশ কেভ ডাইভারের একটি দল। সেই দলটিই নিখোঁজ ১৩ জনকে খুঁজে বার করে। ওই দলেরই এক সদস্য জানান, আটকে পড়া কিশোরদের প্রত্যেকেরই বয়স ১১ থেকে ১৬-এর মধ্যে। ওই দলে তাদের কোচও ছিলেন। তিনিই একমাত্র বড়। ২৫ বছর বয়স তাঁর। গুহার ভিতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। আর তার মধ্যেই একটি বড় পাথরের উপর গুটিসুটি মেরে বসেছিল ওই ১৩ জন। প্রত্যেকেরই গায়ে লাল জার্সি। মুখে টর্চের আলো পড়তেই চোখ ঝলসে ওঠে তাদের। ক্ষীণ কণ্ঠে উদ্ধারকারীর কাছ থেকে খাবার চাইছিল কেউ।
নির্বাহী সম্পাদক