গত মাসে (জানুয়ারি) চীনভিত্তিক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ডিপসিক তাঁদের নিজস্ব চ্যাটবট (ডিপসিক এআই অ্যাসিসট্যান্ট) ও ‘আর১’ (আর ওয়ান) রিজনিং এআই মডেলটি রিলিজ করার মাধ্যমে এআই প্রযুক্তির জগতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তিখাতে বিরাজমান স্থিতাবস্থাকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় ডিপসিক। এবারে জানা গেল, চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এআই নিয়ে কোর্স চালু করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ডিপসিক এআই নিয়ে পড়াশোনা করবে।
উল্লেখ্য, ডিপসিকের আগমনকে প্রযুক্তি জগতের অনেকেই চীনের জন্য ‘স্পুটনিক মুহুর্ত’ (পৃথিবী থেকে কক্ষপথে প্রথম স্যাটেলাইট পাঠানোর মুহূর্ত) বলে অভিহিত করেছেন। লিয়াং ওয়েনফেং-এর প্রতিষ্ঠিত ডিপসিক তাঁদের ‘আর১’ মডেলটি তৈরি করেছে অতি অল্প খরচে এবং এর অপারেশন খরচও তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। কিন্তু সক্ষমতার দিক থেকে চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই’র উন্নত মডেল ‘০১’ এর সাথেও একে তুলনা করা যায়।
আমেরিকা ও ইউরোপ একদিকে যেমন ডিপসিকের বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ নিয়ে এসেছে অন্যদিকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলো ডিপসিককে কাজেও লাগাতে শুরু করেছে। তবে তথ্য সুরক্ষা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ইতোমধ্যেই ইতালি, সাউথ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশে বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে ডিপসিক। আরও কয়েকটি দেশে সরকারি নজরদারিতে রয়েছে ডিপসিকের চ্যাটবটটি।
ইউরোপ ও আমেরিকার চোখে ডিপসিক যেমনই হোক না কেন, চীন তাঁদের এআই খাতে ডিপসিককে গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন হিসেবে দেখছে। সম্প্রতি দেশটির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এআই নিয়ে কোর্স চালু করার করা জানিয়েছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে যাচ্ছে ডিপসিকের তৈরি এআই চ্যাটবট ও মডেলগুলো। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ডিপসিকের তৈরি দুটি এআই মডেল-ই (ভি৩ ও আর১) বেশ সাড়া জাগিয়েছে। আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির প্রকৌশলীরাও ডিপসিক এআই নিয়ে পঞ্চমুখ। সক্ষমতার দিক থেকে ডিপসিকের মডেলগুলোকে তুলনা করা যায় মেটা ও ওপেনএআই’র উন্নত এআই মডেলগুলোর সাথে।
চীনের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে এআই কোর্স?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতে নিজেদের উদ্ভাবনী সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চীন সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণাকে ত্বরান্বিত করা। এছাড়া গত মাসে (জানুয়ারি) চীন তাঁদের প্রথম জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে, যার লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে শিক্ষাভিত্তিক একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হওয়া।
এই প্রেক্ষাপটে দেশটির বেশ ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলাদা কোর্স চালু করার ঘোষণা দিয়েছে। দক্ষিণ গুয়াংদং প্রদেশের শেনঝেন বিশ্ববিদ্যালয় গত সপ্তাহেই জানিয়েছে যে, তাঁরা ডিপসিক-কে কেন্দ্র করে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই কোর্সটি শিক্ষার্থীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার ও শেখার সুযোগ করে দিবে। এছাড়া নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও নৈতিকতাসহ এআই প্রযুক্তির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং দিকসমূহ সম্পর্কেও জানতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও এর নৈতিক ব্যবহারের মানদণ্ডের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয়েও শেখানো হবে এই কোর্সে।
চীনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ঝেইজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় চলতি মাসেই ডিপসিক নিয়ে বিশেষ কোর্স চালু করার কথা জানিয়েছে।
সাংহাই’র জিয়াও তং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের কোর্সগুলোতে উন্নত এআই লার্নিং টুল হিসেবে এখন ডিপসিক ব্যবহার করছে। ডিপসিক ব্যবহার করার মাধ্যমে রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের শিক্ষাদান, গবেষণা ও ক্যাম্পাস অফিসের কার্যক্রমকে আরও ত্বরান্বিত করতে পেরেছ।
উল্লেখ্য, গত সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক সভায় দেশটির প্রযুক্তি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাৎ করেছে। উক্ত সভায় অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন আলিবাবা’র প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা ও ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স