প্রায় ১৬ বছর বন্ধ থাকা শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড’ পুনরায় চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেসরকারিকরণের তালিকা থেকে অতি সম্প্রতি মিলটিকে অবমুক্ত করা হয়েছে। বুয়েট-এর একটি পূর্ণাঙ্গ ও বহুমাত্রিক ‘টেকনো-ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি’র ভিত্তিতে নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস ও মিলের জমিতে তিন ক্যাটাগরির শিল্প কারখানা স্থাপনের সুপারিশ করেছে ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ (বিসিআইসি)। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর-ও পেপার মিলটি পুনরায় চালু এবং ‘খুলনা নিউজপ্রিণ্ট মিল’-এর আদলে বিদ্যুৎ বিভাগ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে মিলটিতে একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনার সপক্ষে মতামত দিয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সের আর্থিক সহায়তায় ২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে পাবনা জেলার পাকশী-তে ১৯৬৭ সালে ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড’ স্থাপন করা হয়েছিল। মিলটির বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন সাদা কাগজ। মিলটির মোট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১৮৮ দশমিক ৪১ একর। এর মধ্যে নিজস্ব জমির পরিমাণ ১৩৩ দশমিক ৫৪ একর ও অবশিষ্ট ৫৪ দশমিক ৮৭ একর রেলওয়ে থেকে লীজ নেওয়া হয়েছে। কাগজ উৎপাদনের মূল কাঁচামাল ছিল ‘ব্যাগাস’ (আখের ছোবড়া), যা স্থানীয় চিনিকলগুলো থেকে সংগ্রহ করা হতো। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে কারিগরি অসামঞ্জস্যতা, কাঁচামালের অভাব, ফার্নেস অয়েলের ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধি ও অ-ব্যবস্থাপনার কারণে মিলটি মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। ক্রম পুঞ্জিভূত লোকসানের কারণে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০০২ সালের ডিসেম্বর থেকে ‘পে-অফ’-এর মাধ্যমে মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।’
সূত্র জানায়, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এটি বেসরকারিকরণের জন্য ২০০৩ সালে তৎকালীন ‘প্রাইভেটাইজেশন কমিশন’ (বর্তমানে ‘বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’)-এ ন্যস্ত করা করা হয়। কিন্তু মিলটি বিক্রির জন্য কমিশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানে কোন সাড়া না পাওয়ায় ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মিলটি পুনরায় চালুর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এ উদ্যোগ সফল না হওয়ায় ২০০৭ সালে মিলটিকে আবার ‘প্রাইভেটাইজেশন কমিশন’-এ ন্যস্ত করা হয়। মিলটি বেরকারিকরণে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহবানে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রীট পিটিশন (১২৯/০৯) মামলার কারণে মিলটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি। গত বছর (২০১৭ সাল) র্ফেরুয়ারিতে উচ্চ আদালত ওই রীটটি খারিজ করে দেন।’
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রীট খারিজ হওয়ার পর বৈদেশিক সহায়তায়/যৌথ উদ্যোগে ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড’-এ ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বছরে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ভার্জিন পাল্প’ ভিত্তিক একটি পেপার মিল স্থাপনের জন্য ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায় বিসিআইসি। সংস্থাটির এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বর্তমানে অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ কাগজ শিল্পের বাজারে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস’-কে লাভজনক করা আদৌ সম্ভব কি না কিংবা কারখানার জমিতে অন্য কোন শিল্প স্থাপন করা যায় কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বহুমাত্রিক ‘টেকনো-ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করার জন্য গত ৯ অক্টোবর বিসিআইসি-কে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।’
সূত্র জানায়, বুয়েট কর্তৃক পরিচালিত পূর্ণাঙ্গ ও বহুমাত্রিক ‘টেকনো-ইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি’- তে ১০ ধরনের কারখানা স্থাপন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়। এসব সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে তিন ক্যাটাগরির শিল্প কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিআইসি। এগুলো হচ্ছে মিনারেল পেপার মিল, পেপার মিল ও পটেটো বেজড স্টার্চ মিল।’