Home » বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে স্থানীয়দের মারধরের অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে স্থানীয়দের মারধরের অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙা সীমান্তে বাংলাদেশি ভূখণ্ডে ঢুকে কয়েকজন বাংলাদেশিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরপর সীমান্তে জড়ো হয়ে বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এলাকাবাসী। সীমান্তের ওপারেও ভারতীয় নাগরিকদের জড়ো হতে দেখা গেছে। পরে বিজিবির টহল দল গিয়ে বাংলাদেশি এলাকাবাসীকে সরিয়ে দেয়।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে নাওডাঙা ইউনিয়নের পশ্চিম বালাতারী সীমান্তের বারোমাসিয়া নদীর ধারে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এ ঘটনা ঘটে।

তবে বিজিবির দাবি, বিএসএফ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কি না এবং কাউকে মারধর করেছে কি না তা প্রাথমিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঠিক কী নিয়ে সীমান্তের দুই পাড়ে স্থানীয়রা জড়ো হয়েছিলেন তা-ও নিশ্চিত হতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বিজিবি।

পশ্চিম বালাতারী গ্রামের পাঁচ জন বাংলাদেশি বিএসএফের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তারা হলেন শামসুল হক (৬০), জাবেদ আলী (৫৫) কাশেম আলী (৫০), রিপন মিয়া (৩৫) এবং তাজুল ইসলাম (৪০)।

মারধরের শিকার বালাতারী গ্রামের বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, ‘জুমার নামাজের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে বারোমাসিয়া নদীর পাড়ে চিল্লাচিল্লি শুনতে পাই। একটু এগিয়ে গেলে হঠাৎ পাঁচ জন বিএসএফ সদস্য বাংলাদেশের জায়গায় ঢুকে আমার দিকে তেড়ে আসে। একজন রাইফেল তুলে মারতে ধরলে আমি রাইফেল ধরে ফেলি। তখন আরেকজন লাঠি দিয়ে আমার হাতে ও চরুতে (ঊরুতে) মাইর দেয়। এ সময় আমার সঙ্গে বেলাল ও জাবেদ ছিল। জাবেদকেও মারধর করে বিএসএফ।’

কেন মারধর, এমন প্রশ্নে শামসুল বলেন, ‘সেটা তো বুঝতে পারি নাই। নামাজ শেষে আমি চিল্লাচিল্লি শুনে নদীর পাড়ে গিয়েছি। তারা কেন আসি মারধর করলো তা জানি না। তবে ওদের দিকেও লোকজন জড়ো হইছিল। তাদেরও বিএসএফ মারছে। কী হইছিল তা জানি না।’

শামসুলকে মারধর করা দেখে এগিয়ে গেলে জাবেদ, কাশেম, রিপন ও তাজুলকেও কিলঘুষি মারে বিএসএফ সদস্যরা।

শামসুল ও জাবেদকে মারতে দেখেছেন বারোমাসি নদীর তীরে বসে থাকা স্থানীয় নারী মঞ্জু বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি বাড়ির পাশে নদীর ধারে বসি ছিলাম। হঠাৎ দেখি বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকছে। এ সময় শামসুল ভাই তাদের বললো, তোমরা এখানে আসছো কেন? তোমরা যাও, দাদা যাও। এই কথা বলার সাথে তাকে ধরি মারছে। হামরা দৌড়ি বাড়ি আসছি।’

বিএসএফের এমন আচরণে এলাকাবাসী সীমান্তসংলগ্ন স্থানে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। খবর পেয়ে বিজিবি ১৫ ব্যাটালিয়নের গোরকমন্ডল ক্যাম্পের হাবিলদার দেলবর হোসেনসহ কয়েকজন বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা এলাকাবাসীকে নিবৃত্ত করে সরিয়ে দেন।

কোনও ধরনের উসকানি ছাড়াই বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশে ঢোকার কারণ জানতে সীমান্তসংলগ্ন কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ভারতের সাহেবগঞ্জ থানাধীন নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের ৫ জন বিএসএফ সদস্য সীমান্ত পিলার ৯৩০-এর ৮ এস পিলারের কাছে আসেন। তখন তারা সম্ভবত ভুলে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন। এ সময় ওই স্থানে কয়েকজন বাংলাদেশিকে দেখতে পেয়ে তারা মারধর করেন। তবে কেন মারধর করেছেন তার কোনও কিনারা পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের দাবি, কয়েকদিন ধরে তারা শুনছিলেন ওপারে বিএসএফ সদস্যরা নতুন এসেছেন। তারা হয়তো এখনও সীমান্ত এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। তবে তাদের এই দাবির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে অনির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে যাওয়া এক চোরাকারবারিকে ধাওয়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেন বিএসএফের পাঁচ সদস্য। এ সময় কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে মুখোমুখি হলে তাদের ওই চোরাকারবারির সহযোগী ভেবে মারধর করে তারা। তবে এ তথ্যের সমর্থনে সীমান্তবাসীর কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লালমনিরহাট বিজিবি ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আলম বলেন, ‘বিএসএফ আদৌ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুরো বিষয় নিয়ে আমরা অনুসন্ধান করছি। বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *