Home » শাহবাগে সড়কে অবস্থান প্রাথমিকের নিয়োগপ্রত্যাশীদের, যান চলাচল বন্ধ

শাহবাগে সড়কে অবস্থান প্রাথমিকের নিয়োগপ্রত্যাশীদের, যান চলাচল বন্ধ

নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে অষ্টম দিনের মতো আন্দোলন করছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তরা। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন তারা। এতে সায়েন্সল্যাব হয়ে মৎস্যভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিন দুপুর দেড়টার পর দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক শিক্ষক দ্রুত নিয়োগের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। একই সময় পাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সড়ক বসে পড়লে পুলিশ প্রথমে জলকামান ব্যবহার করে তাদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপরও আন্দোলনকারীদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে। আজকের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন আন্দোলনরতরা। আজ আন্দোলনকারীদের পরনে কাফন, হাতে জাতীয় পতাকা রয়েছে। অনেক নিয়োগপ্রত্যাশী নারীর কোলে শিশুও আছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ পাওয়া তৃতীয় ধাপের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগের জন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু করেন সুপারিশপ্রাপ্তরা। এর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়ে চাকরিতে কর্মরত আছেন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সামনে আন্দোলন চলাকালে সন্ধ্যার আগে নিয়োগপ্রত্যাশীরা ঘোষণা দেন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ‘জাস্টিস ফর টিচার’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ শুরু হবে। ৬ হাজার ৫৩১ জনের যোগদান নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়।

আন্দোলনকারী মহিব বুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকারের জন্য রাজপথে নেমেছি। বর্তমান সরকারই আমাদের সুপারিশ করেছে নিয়োগের জন্য। তাহলে আমরা কেন নিয়োগবঞ্চিত হবো? আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই ফল প্রকাশ করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশপ্রাপ্তরা চাকরি করছে। অথচ আমাদের সঙ্গে কেন এ বৈষম্য? আমরা চাই, অনতিবিলম্বে আমাদের যোগদান নিশ্চিত করুক সরকার।’

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) পুলিশি নির্যাতনের পর মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীরা বৈঠক করেন। সচিবালয়ে বৈঠকে যান নিয়োগ প্রত্যাশীদের প্রতিনিধি জান্নাতুল নাঈম সুইটি, তালুকদার পিয়াস, নওরীন আক্তার, শামিমা আক্তার, মালা বোস, শাহরিয়ার আজিম। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে আদালতে আপিল করা হয়। কাউকে নিয়োগ থেকে বাদ দেওয়া হবে না জানানো হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

জান্নাতুল নাঈম সুইটি ও ফাহমিদা রোজী বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে নিয়োগের নিশ্চয়তার আল্টিমেটাম দেন। এরপর তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

জান্নাতুল নাঈম সুইটি বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমাকের আমাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। যদি এই অবান্তর রায় বাতিল করা না হয়, রাষ্ট্র তাহলে এই আন্দোলন আরও কঠিন হবে। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের যোগদান নিশ্চিত না করতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথ ত্যাগ করবো না।’

প্রসঙ্গত, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালে তিনটি ধাপে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম এবং অপেক্ষমান তালিকা থেকেও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

তৃতীয় ধাপের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রকাশিত হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ২১ এপ্রিল। মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় ২০২৪ সালের ১২ জুন।

এরপর আইন মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ৩১ অক্টোবর তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে ছয় হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এই অবস্থার মধ্যে নিয়োগ সুপারিশ না পাওয়া ৩১ জন হাইকোর্টে রিট করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের জানানো হয়, সুপারিশ পাওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের একজনও বাদ যাবে না। আইনি জটিলতা শেষ করে দ্রুত তাদের যোগদান করানো হবে। কিন্তু চেম্বার জজ আদালত, আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্টে সাতটি শুনানির পর চূড়ান্ত রায়ে ৬ ফেব্রুয়ারি ফল বাতিলের ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার পর ওইদিন থেকেই নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া ৬ হাজার ৫৩১ জনের পক্ষে নিয়োগ ও যোগদানের আন্দোলন শুরু হয়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *