Home » যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্কে আছেন বাংলাদেশি প্রবাসিরা

যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্কে আছেন বাংলাদেশি প্রবাসিরা

দ্বিতীয়বার ক্ষমতার মসনদে বসার পরপরই আমেরিকা থেকে অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর প্রক্রিয়া ‍শুরু করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের এই অভিবাসী খেদাও নীতিতে বিশ্বের নানান দেশের মানুষের পাশাপাশি বিপাকে পড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা বাংলাদেশিরাও। এ নিয়ে এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করছে সেখানকার বাঙালি কমিউনিটিতে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এপিসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ট্রাম্প মসনদে বসার তিন দিনের মধ্যেই শুরু হয়েছে বিনা নথিতে আমেরিকায় বসবাস করা ভিনদেশিদের ধরে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৩৮ জন অবৈধ অভিবাসীকে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের তরফে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রেসসচিব ক্যারোলিন লেভিট।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড় শুরুর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বাংলাদেশি বৈধ কাগজপত্রবিহীন বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুধু বাংলাদেশিই নন, যুক্তরাষ্ট্রে যারাই অবৈধ অভিবাসী এই আতঙ্ক তাদের সবার। তারা নানা মাধ্যমে এই আতঙ্কের কথা শেয়ার করছেন।

২০শে জানুয়ারি শপথ নিয়েছেন ট্রাম্প। পরদিন মঙ্গলবার শতাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে অভিবাসী তাড়ানোর আদেশও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলেরও আদেশ দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালি কমিউনিটির তথ্য বলছে, দেশটির ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্ট নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন বরো’র ফুলটন থেকে গ্রেপ্তার করেছে চার বাংলাদেশিকে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা ঘরের বাইরে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু ঘরে থেকেও স্বস্তি নেই। অভিবাসন কর্মকর্তারা বাড়িঘরেও হানা দিতে পারেন। নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনকে অনেকেই বাঙালিপাড়া হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে যান, তাদের বেশির ভাগই প্রথমে ব্রুকলিনে আশ্রয় নেন। অনেকে সেখানেই অবস্থান করেন। বিভিন্ন রকম কাজ জুটিয়ে নিয়ে থেকে যান ব্রুকলিনে। খবরটি মার্কিন প্রশাসনও জানে। ফলে তাদের চোখ যে সেদিকে পড়বে তা অনুমেয়।

জানা গেছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্টের কর্মকর্তারা বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সাদা পোশাকে হাজির হচ্ছেন। এ জন্য তাদের আগে থেকে কেউ চিনতে পারছেন না। নিজে আত্মগোপন করারও সুযোগ পাচ্ছেন না। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক বাংলাদেশি মিডিয়াকে বলেছেন, তারা ফুলটনের একটি এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলেন। অতর্কিতে সেখানে সাদা পোশাকে কয়েকজন কর্মকর্তা গিয়ে উপস্থিত হন। তারা তাদেরকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন। কিন্তু তার প্রতিবাদ করেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম সংশোধনী অনুযায়ী তিনি পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য নন। তার এমন আচরণ দেখে গ্রেফতার করা হয় তাকে। ওই আড্ডায় থাকা অন্যদের ছেড়ে দেয় তারা। এর থেকে কিছুটা দূরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস ইনফোর্সমেন্টের কর্মকর্তারা। তবে এসব বাংলাদেশির কারও নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ধরা পড়ার আতঙ্কে বাঙালি-অধ্যুষিত এলাকার সড়ক ও রেস্তরাঁয় যেখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যেত, এখন সেখানে লোকজনের ভিড় নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাটর্নি রাজু মহাজন মিডিয়াকে বলেছেন, ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যারা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা সহ দক্ষিণ আমেরিকার পথ ধরে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢুকতেন, সেই পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আগে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দেয়া হতো। সে হিসেবে অভিবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ব্যাপক সুযোগ পেয়েছেন। এখন থেকে মেধার ভিত্তিতে সেসব নিয়োগ নির্ধারিত হবে। ফলে ছাঁটাই হতে পারেন অসংখ্য বাংলাদেশি। সংবিধানের তোয়াক্কা না করে নির্বাহী আদেশ জারি করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের একটি বিধানও বাতিল করেছেন ট্রাম্প। এতে এখন থেকে ৩০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা দেশটির নাগরিকত্ব পাবে না।

এদিকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত ২২টি অঙ্গরাজ্য ও ২টি শহর। অঙ্গরাজ্য ও শহর দু’টির পাশাপাশি ওই আইনি লড়াইয়ে শরিক হয়েছে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠনও। মঙ্গলবার বোস্টনের একটি প্রাদেশিক আদালতে ওই মামলা করেছে ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া এবং সানফ্রান্সিসকো শহর সহ মোট ২২টি অঙ্গরাজ্যের একটি জোট। যার নেতৃত্বে রয়েছে ডেমোক্রেট দলের নেতারা। তাদের দাবি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণীত অধিকার।

ট্রাম্প প্রশাসনের ধরপাকড় অভিযান সামনে রেখে অভিবাসীদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, আইনপ্রয়োগকারী কোনো সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। অন্যের ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এই কঠিন সময়ে অহেতুক পুলিশি অথবা অন্যকোনো বিবাদ অথবা ঝামেলায় জড়ানো যাবে না।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *