গাজা যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রথম দিন তিন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে মুক্তি পেলেন ৯০ ফিলিস্তিনি বন্দি। এর মধ্যে দিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা ও অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) প্রায় ১৫ মাস পর সহিংসতা কমে আসার এক সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ছিলেন ৬৯ জন নারী ও ২১ জন কিশোর। তারা সবাই পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমের বাসিন্দা।
মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের বরণ করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন হাজারো মানুষ। তাদের বহনকারী বাস রামাল্লায় পৌঁছালে আতশবাজি পোড়ানোর মাধ্যমে উল্লাস প্রকাশ করেন তারা। গাজার বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা হামাস সদস্যরা জনসম্মুখে আসা শুরু করলে তাদেরও অভিনন্দিত করতে থাকেন সাধারণ মানুষ।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় নিজেদের এলাকায় ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। এছাড়া, হামলা বন্ধ থাকায় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে সহজে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
এদিকে, গাজা থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে রেড ক্রসের গাড়িতে উঠতে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইসরায়েলিরা। তেল আবিবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে ওই ভিডিও দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত তিন নাগরিক রমি গোনেন, ডোরোন স্টেইনব্রেকার ও এমিলি ডামারি- প্রত্যেকে তাদের মায়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর প্রকাশ করা ভিডিওতে মুক্তিপ্রাপ্তদের দৃশ্যত সুস্থ বলেই মনে হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অনুপ্রবেশ করে হামাস হামলা চালানোর পর থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ নাগরিক নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করে আসছে ইসরায়েল। এই জিম্মিদের মধ্যেই ছিলেন মুক্তিপ্রাপ্ত ওই তিন ইসরায়েলি নাগরিক।
এই হামলার পরই হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়ে গাজার সামরিক আগ্রাসন শুরু করে তেল আবিব। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজা স্বাস্থ্য অধিদফতর দাবি করে আসছে। আর উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের সবাই হয়েছেন বাস্তুচ্যুত।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এসময় গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা হবে এবং হামাসের জিম্মায় থাকা অবশিষ্ট ১০০ ইসরায়েলি ও বিদেশি জিম্মির মধ্যে ৩৩ জন মুক্তি পাবেন। বিনিময়ে ইসরায়েল দুহাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, অনেক জিম্মি ইতোমধ্যেই মারা গেছেন।