গত কয়েকদিন ধরেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে তামিম ইকবাল থাকবেন কি না, তা নিয়ে চলছিল আলোচনা। পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে হতে যাওয়া ফেব্রুয়ারির এই ওয়ানডে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাকেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল নির্বাচক কমিটি। বাংলাদেশের জার্সিতে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার। শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম।
তামিম বিদায়ের ঘোষণায় শুরুটা করেছেন এভাবে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তামিম আরও লেখেন, ‘অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক। এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনও ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘তার পরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যেকোনও পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনও উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
২০২৩ বিশ্বকাপে তাকে দলে রাখা না রাখা নিয়ে নানান আলোচনা হয়েছে। সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তামিম লেখেন, ‘তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তারপরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনও আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়। ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, ‘তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।’
দেড় বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তামিম। ২০২৩ সালের ৬ জুলাই আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে ফিরে সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলে চলে যান জাতীয় দলের বাইরে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও টেস্ট ও ওয়ানডে খেলার দরজা খোলা রেখেছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাকে পাওয়ার আশা করছিল বিসিবি। তার মতামত জানতেই বুধবার তার সঙ্গে সভায় বসেছিল নির্বাচক কমিটি। যদিও সভাতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। দুই একদিনের মধ্যেই তার খেলা না খেলার বিষয়ে জানা যাবে বলেছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। দুই দিন পার না হতেই নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার।
২০০৭ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ম্যাচটিই ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ হয়ে থাকলো। একই বছর সেপ্টেম্বরে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পান তামিম। পরের বছর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে পা রাখেন।
৭০ টেস্ট, ২৪৩ ওয়নাডে ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১৫ হাজার ২৪৯ আন্তর্জাতিক রান তামিমের এবং সেঞ্চুরি ২৫টি ও হাফ সেঞ্চুরি ৯৪টি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও বিপিএলে খেলে যাচ্ছেন ৩৫ বছর বয়সী তামিম। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তিনি।