Home » সিলেটে চলছে অবাধে টিলা কাটা

সিলেটে চলছে অবাধে টিলা কাটা

প্রকৃতি আমাদের তৈরি করে দেয় যে আমরা কোথায় থাকবো। আমরা প্রকৃতির সিলেকশন অনুযায়ী চলতেছি। কিন্তু, আমরা প্রকৃতিকে এখন নিজেদের মতো করে ব্যবহার করছি। যার কারণে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। সিলেটে এখন অহরহ টিলা/পাহাড় কাঁটা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না কোনো আইন। যার কারণে প্রাণহানি ঘটছে। টিলা কাঁটার কারণে ২০১২ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত সিলেটে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এই টিলা প্রধানত সরকারি উদ্যোগের কারণেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে বন্যপ্রাণী তাদের পর্যাপ্ত আবাসস্থলের অভাবে লোকালয়ে চলে যাচ্ছে আর প্রাণ হারাচ্ছে।

রবিবার সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) উদ্যোগে আয়োজিত প্রকৃতি, পরিবেশ ও জনস্বার্থে পাহাড়/টিলা সংরক্ষণের গুরুত্ব: আমাদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হোসাইন মো. আল-জুনায়েদ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সিলেট। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মোঃ রাসেলুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিলেট, মোহাম্মদ ফেরদৌস আনোয়ার পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়।

এসময় তিনি একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী সিলেটে ২০০৯ সালে টিলার সংখ্যা ছিল ১০২৫ টি আর বর্তমানে এটা এসে পৌঁছেছে মাত্র ৫৬৫ টি তে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করলেই অনুধাবন করা যায় কতখানি আইনের সফল বা কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে। টিলা মূলত ধ্বংস হয় সরকারি উদ্যোগ, ব্যক্তি উদ্যোগ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, আইন প্রয়োগের অভাবে। টিলাকে পাথর কোয়ারী হিসেবে ইজারা প্রদান করা হচ্ছে সরকারিভাবে। যার কারণে আর রক্ষা করা যাচ্ছে না। আর চা-শিল্পে প্রভাব পড়ছে টিলা কাঁটার কারণে। যার কারণে এখন চা-শ্রমিকদেরও আয় কমে যাচ্ছে। একাধিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তি স্বার্থের প্রাধান্য ও প্রলম্বিত আইনি প্রক্রিয়ার কারণে এই টিলা কাঁটা থামানো যাচ্ছে না।

বেলার কো-অর্ডিনেটর হাসানুল বান্নার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হোসাইন মো. আল-জুনায়েদ।

এসময় তিনি বলেন, টিলার যে সংখ্যা দেওয়া হয়, সেটা একটা পরিসংখ্যান। এটা একেবারে ফেইস টু ফেইস ভিত্তিতে না। প্রতিদিনই টিলা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা এটা রক্ষা করতে পারছি না। টিলায় কৃষি কাজ হলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। এতে করে টিলাগুলো যেরকম সুরক্ষিত থাকে, এত করে ভাঙ্গন হয় না। কিন্তু, সিলেটে কৃষিকাজের কথা বলেই টিলা কাঁটা হচ্ছে। আমরা যদি কোনো একটা টিলাকে টার্গেট করে একটা ম্যানেজমেন্ট হিসেবে দেখতে পারি। আমরা এতে করে যদি কোনো সুফল পাই, তাহলে বড় করে কাজ করতে পারি।

এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রাসেলুর রহমান।

এসময় বক্তারা আরো বলেন, যে জিনিষ সৃষ্টি করার ক্ষমতা আমার নাই, সেটা ধ্বংস করার অধিকারও আমার নাই। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে সংরক্ষণের গুরুত্ব, তো টিলা থাকলেই তো আমরা সংরক্ষণ করবো। টিলা যদি কেটেই ফেলা হয়, তাহলে তো সংরক্ষণের জন্য আমার আর কিছু থাকবে না। ইমিডেট অ্যাকশন হিসেবে টিলা কাঁটাটাকে বন্ধ করতে হবে। সিলেটে পাহাড় কাঁটা হচ্ছে। এটা একটা বড় সমস্যা।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ কাউসার, অ্যাডভোকেট মুহিত লাল ধর, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব, সাজিদুর রহমান, শাবির শিক্ষক ড. শফিকুল ইসলাম, ব্লু-বার্ড স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাসিমা চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল ইসলাম, জৈন্তাপুরের এটিএম বদরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেইন, ড. প্রফেসর তাহমিনা ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সিদ্দিকী, সত্যজিৎ কুমার দাস, জৈন্তাপুরের নাজমুল ইসলাম, সাংবাদিক সাদিকুর রহমান সাকি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান, আইডিয়ার সহকারী পরিচালক নাজিম আহমদ, নাসির উদ্দিন আহমদ।

আরও উপস্থিত ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইশরামুর কবির, সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, শাবির শিক্ষক আবুল কাশেম উজ্জল, অ্যাডভোকেট এমাদউল্রাহ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *