ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ড. মনমোহন সিং মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ৯২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়সজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মৃত্যুকালে তিনি তার স্ত্রী ও তিন কন্যাকে রেখে গেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মনমোহন সিং ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাকে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের স্থপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। তার নেতৃত্বে ভারত এক অনন্য অর্থনৈতিক বিকাশের সাক্ষী হয়েছিল। শত কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসার কৃতিত্বও তার সরকারের।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বর্তমান পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া মনমোহন সিং অভাবের মধ্যে বড় হয়েছেন। মোমবাতির আলোয় পড়াশোনা করে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং অক্সফোর্ড থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯১ সালে তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান এবং সেই সময়ে দেশের তীব্র অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি বাজার উন্মুক্তকরণ এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়ন করেন, যা ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক।
২০০৪ সালে কংগ্রেস পার্টির আকস্মিক বিজয়ের পর সোনিয়া গান্ধী তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেন। সেই সময় তার নেতৃত্বে গ্রামীণ কর্মসংস্থান কর্মসূচি এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এতে কংগ্রেস পার্টির জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের ধস নামে। অর্থনৈতিক মন্দা ও ধীর নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া তার সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত আজ তার অন্যতম সেরা নেতাকে হারিয়েছে। ড. মনমোহন সিংজির অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মনমোহন সিং তার শেষ দিনগুলোতে বলেছিলেন, আমি বিশ্বাস করি, ইতিহাস আমার প্রতি বর্তমানের সংবাদমাধ্যম বা বিরোধী দলের চেয়ে দয়ালু হবে।