Home » শেষ কর্মদিবস ছিল জাহাজচালক কিবরিয়ার, দেখে যেতে পারলেন না মেয়ের বিয়ে

শেষ কর্মদিবস ছিল জাহাজচালক কিবরিয়ার, দেখে যেতে পারলেন না মেয়ের বিয়ে

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবোঝাই জাহাজে হত্যার শিকার ৭ জনের মধ্যে একজন জাহাজের মাস্টার (চালক) গোলাম কিবরিয়া (৬৫)। নিহতদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়ার ভাগনে শেখ সবুজও (২৬) রয়েছেন। একই পরিবারের দুজনের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ স্বজনরা।

জানা গেছে, চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস ছিল খুন হওয়া জাহাজচালক গোলাম কিবরিয়ার। জাহাজের মালামাল খালাস করে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন বাড়িতে। ১০ জানুয়ারি ছিল ছোট মেয়ের বিয়ে। কিন্তু তার আগে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন তিনি। মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়া হলো না তার।

গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ফরিদপুর জেলা সদরের গেরদা ইউনিয়নের জোয়াইর গ্রামে। প্রায় ৩০ বছর আগে জাহাজের কাজে যোগ দেন তিনি। এমভি আল-বাখেরা জাহাজে ছিল তার চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস। কিন্তু গতকাল সোমবার সকালে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীতে ওই জাহাজ থেকে খুন হওয়া আরও ছয় জনের সঙ্গে উদ্ধার করা হয় তার লাশ। কিবরিয়ার পরিবার লাশটি শনাক্ত করে। এ ঘটনায় তার ভাগনে শেখ সবুজও নিহত হয়েছেন।

নিহত কিবরিয়ার ভাই সিরাজ বলেন, ‘জাহাজের ওই ট্রিপটি ছিল আমার ভাইয়ের শেষ কাজ। মাল রেখেই বাড়ি চলে আসতে চেয়েছিলেন। এসে বড় আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে মেয়ের বিয়ের দিন নির্ধারণ করেছিলেন। সকল প্রস্তুতিও শেষ।’

কথা হয় শেখ সবুজের ভাই ফারুক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নিহত সাত জনের মধ্যে মামা গোলাম কিবরিয়া ও আমার ভাই শেখ সবুজ আছেন। মামা ৩০ বছর ধরে জাহাজের চাকরি করলেও ভাই সবুজ মাত্র দেড় মাস আগে যোগ দেয়। মেয়ের বিয়ে নিয়ে রবিবার রাতে মামার সাথে শেষ কথা হয়েছিল। জানুয়ারিতে মেয়ের বিয়ের জন্য বাড়ি আসার কথা ছিল মামার।’

এমভি আল-বাখেরা জাহাজের মালিক দিপলু রানা বলেন, ‘জাহাজে মাস্টারসহ মোট ৮ জন স্টাফ ছিলেন। জাহাজে মাস্টার (চালক) ছিলেন কিবরিয়া। তার সঙ্গে আমার রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কথা হয়েছিল। সে বলেছিল বহরে আরও জাহাজ আছে। সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে জাহাজ নোঙর করা হবে। রাতে তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে আমাদের আরেক জাহাজ এমভি মুগনি-৩-এর মাধ্যমে এমভি আল-বাখেরা জাহাজের খোঁজ পাওয়া যায়। জাহাজে থাকা ৮ জন স্টাফের মাধ্যমে সাত জন মারা গেছেন। বেঁচে থাকা জুয়েলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।’

লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্র জানিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর এমভি আল-বাখেরা নামের জাহাজটি ইউরিয়া সার পরিবহনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮০০ মেট্রিক টন। জাহাজটির পণ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ পাওয়ার পর জাহাজটিতে ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে ৭২০ টন ইউরিয়া সার বোঝাই করা হয়। রবিবার ভোরে জাহাজটি সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। এই সার ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি)।

এদিকে, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করে রাখা এমভি আল-বাখেরা জাহাজে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাত জনের মধ্যে ছয় জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একই কোম্পানির অপর জাহাজের (মুগনি-৩) নাবিকরা এই ছয় জনের পরিচয় জানিয়েছেন। তবে নিহতদের পরিচয়ের বিষয়ে এখনও জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।

সহকর্মীদের দেওয়া তথ্যমতে, নিহতরা হলেন জাহাজটির চালক (মাস্টার) কিবরিয়া, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। নিহত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহত ব্যক্তির নাম জুয়েল। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *