হাজারও দর্শকের প্রতীক্ষা ফুরিয়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে মঞ্চে হাজির হলেন পাকিস্তানের বিশ্বখ্যাত শিল্প ওস্তাদ রাহাত ফতেহ আলী খান। তখন স্টেডিয়ামজুড়ে তাঁর বাদকদলের সূচনা সংগীত ‘তেরি মেরি’র আবেশ। অর্থাৎ রাহাতের মিনিট পাঁচেক আগেই জ্যামিংয়ে তাঁরা এই গানটির সুরে শ্রোতাদের বুঁদ করেছেন। বেজেছিল সেতার ও সানাই।
এভাবেই শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ‘ইকোস অব রেভ্যুলিউশন’ কনসার্টে গাইতে মঞ্চে ওঠেন রাহাত ফতেহ আলী খান ও তাঁর দল।
চমক হিসেবে এই সংগীতজ্ঞ জানালেন যে, ছেলে শাহজামান আলী খানকে নিয়ে প্রথমবার ঢাকায় পারফর্ম করছেন তিনি। এর আগে এসেছিলেন, তবে ছেলেসহ এবারই প্রথম। শাহজামানের এটাই প্রথমবার বাংলাদেশ সফর।
রাহাত ফতেহ আলী বলেন, ‘‘পাকিস্তান থেকে তোমাদের ভালোবাসায় চলে এলাম। প্রথমবার আমার ছেলে বাংলাদেশে এসেছে। তাকে নিয়েই শুরু করলাম ‘আস পাস হে খোদা’।’’
এরপর একে একে গেয়েছেন ‘সাজনা তেরে বিনা’, ‘নিত খেহার মাঙ্গা’, ‘ওরে প্রিয়া’, ‘তেরি আঁখো কি দড়িয়া কা’, ‘মেরে রাশকে কামার’ প্রভৃতি গানগুলো। জনপ্রিয় বিভিন্ন গজলও পরিবেশনা করেছেন। গেয়েছেন তাঁর ছেলে শাহজামানও।
প্রসঙ্গত, জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতের পরিবারকে সহায়তার জন্য এই চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজক ছিল ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
শনিবার বিকেল ৪টা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয় কনসার্ট। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম শুরুতে ঘোষণা দেন, কনসার্টের সামনের সারিতে ভিআইপি আসনে থাকবেন অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জন দর্শক।
ঢাকায় রাহাত ফতেহ আলী খান, রাতে ছড়াবেন সুরের মূর্ছনাঢাকায় রাহাত ফতেহ আলী খান, রাতে ছড়াবেন সুরের মূর্ছনা
এরপর মঞ্চে ওঠে কাওয়ালী গানের দল ‘সিলসিলা’। তাঁদের আধা ঘণ্টার পরিবেশনা শেষে ‘আওয়াজ উডা’ গানের জন্য শিল্পী র্যাপার হান্নান মঞ্চে আসেন। হান্নানের পর ‘কথা ক’ গান দিয়ে দর্শক মাতান র্যাপার সেজান।
খানিক বিরতির পর সাড়ে ৫টার দিকে মঞ্চে ওঠে রকব্যান্ড ‘আফটারম্যাথ’। আর্মি স্টেডিয়ামে এটাই তাঁদের প্রথমবার পারফরম্যান্স। পরিবেশনা শুরু হয় ‘অধিকার’ গান দিয়ে। তারপর ‘উৎসর্গ’, ‘মাটির রোদ’সহ আরও কয়েকটি গান পরিবেশন করেন তাঁরা।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে মঞ্চে ওঠে ব্যান্ড ‘চিরকুট’। ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি দিয়ে শুরু করেন তাঁরা। এরপর প্রায় এক ঘণ্টার মতো পরিবেশনায় ব্যান্ডটি শুনিয়েছে ‘দুনিয়া’, ‘মরে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘কানামাছি’, ‘আহারে জীবন’সহ বেশকিছু গান।
চিরকুটের পরিবেশনা শেষে অভ্যুত্থানে আহতদের নিয়ে ফের মঞ্চে ওঠেন সারজিস আলম। ‘আমি কে তুমি কে’—স্লোগানসহ আধা ঘণ্টার মতো কথাবার্তা চলে। এ সময় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির লোমহর্ষক দমন-পীড়নের বিষয়টি সামনে আসে। মঞ্চে শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেন সারজিসরা।
সাড়ে ৮টার দিকে মঞ্চে ওঠে ব্যান্ড ‘আর্টসেল’। প্রথম পরিবেশনা ছিল ‘পথচলা’ গানটি। এরপর একে একে ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ধূসর সময়’, ‘আর্তনাদ’, ‘অন্যসময়’ প্রভৃতি গানগুলো পারফর্ম করেন। কিছুটা ‘অনিকেত প্রান্তর’ দিয়েও ছুঁয়ে গেছেন শ্রোতাদের। শেষ গান ছিল ‘দুঃখবিলাস’।
যে কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সৌদির নারী ব্যান্ড সিরাযে কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সৌদির নারী ব্যান্ড সিরা
এরপর মঞ্চে আসেন কনসার্টের মূল আকর্ষণ রাহাত ফতেহ আলী খান। ঘণ্টা দুয়েক পারফর্ম করেন তিনি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন দর্শক।
কনসার্টে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ প্রমুখ।