Home » আওয়ামীলীগ নেতা মিসবাহ সিরাজকে কুপিয়ে ‘মুক্তিপণ’ নিলো কারা

আওয়ামীলীগ নেতা মিসবাহ সিরাজকে কুপিয়ে ‘মুক্তিপণ’ নিলো কারা

অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। সিলেট আওয়ামী লীগের এক দাপুটে নেতা। দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন। দলে তাঁর অনুসারীও কম নন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি ছিলেন লাপাত্তা। নিজ বাসার অদূরে গোপনে বসতি গড়লেও টের পায়নি পাড়া, পড়শীও। সেই মিসবাহ সিরাজ ঘিরেই হঠাৎ আলোচনার ঝড় উঠেছে। তিনি কিভাবে অপহরক চক্রের কবলে পড়লেন, কারা তাকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিলো?- এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, বিশ্লেষণ। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর সিলেট মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন ইউনিটও। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন মিসবাহ সিরাজের পরিবারও। মোটা অংকের অর্থ খুইয়ে মিসবাহ সিরাজকে অক্ষত ফেরত পেলেও ঘটনার ব্যাপারে সব কিছু খোলাসা করছেন না তাঁরা।

এ দিকে মিসবাহ সিরাজের শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে মুনতাহা আহমদ মিসবাহ বলেছেন, ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য মিসবাহ সিরাজকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ তিনি তার বাবার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন।

মিসবাহ সিরাজের পরিবার ও স্বজনসহ একাধিক সূত্র জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টার দিকে মিসবাহ সিরাজ সিএনজি অটোরিকশাযোগে নগরীর সুবিদবাজারের মিয়া ফাজিল চিশত এলাকায় একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। সাথে ছিলেন মিজান নামের এক রঙমিস্ত্রী। পথিমধ্যে ওই এলাকার মাসালাবাজার নামীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌঁছামাত্র কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে। অস্ত্রেরমুখে তাকে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর মিসবাহ সিরাজের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। তারা কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ নিয়ে দর কষাকষি চলে। নির্ধারণ হয় মুক্তিপণ। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তিপণের টাকা মধ্যস্ততাকারীর হাতে তুলে দেওয়ার পর মিসবাহ সিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সাগরদিঘীর পাড় এলাকায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রাগীব বাবেয়া হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। ভোররাত ৪টার দিকে তাকে ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগেও পরে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং এভারগ্রীনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

আল হারামাইন হাসপাতালের পরিচালক ডা. চৌধুরী নাহিয়ান বলেন, ‘ভোররাত ৪টার দিকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও স্বজনেরা বলেছেন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।’

ডা. চৌধুরী নাহিয়ান আরো বলেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাম পায়ে হাটুর নীচে রক্তাক্ত কাটা জখম রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর সকাল ১০টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান স্বজনেরা।

প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানিয়েছেন, এভারগ্রীন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যবস্থা করে দেন হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার পারভেজ।

এ ব্যাপারে এভারগ্রীন এম্বুলেন্স সার্ভিসের ম্যানেজার সুমন আহমদ বলেন, ‘সকালে আল হারামাইন হসপিটাল থেকে ফোন করে একটি অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয়। তবে, কিছু সময় পর অ্যাম্বুলেন্সটি ফিরে আসে। অ্যাম্বুলেন্সটি কার জন্য নেয়া হয়েছিল- তা তিনি জানেন না।’

এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। দুর্বৃত্তরা তাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ অবগত হয়েছেন। পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

এ বিষয়ে জানতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মেয়ে মুনতাহা আহমদ মিসবাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘তার বাবার অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি মানুষ। কখনো কারো ক্ষতি করেননি। শুধু বলবো, আমার বাবার অবস্থা গুরুতর।’ সবার কাছে তার বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

এদিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘সিলেট নগরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপানো হয়েছে। তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দল। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে বিদেশ পাড়ি জমান। ওই সময় থেকে আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *