ডেস্কনিউজ:
ব্রিটেনে কোম্পানি পরিচালক হিসেবে ৭ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন সেলিব্রিটি শেফ টমি মিয়া ও তার স্ত্রী। এডিনবরার বিখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজ হোটেলের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত জরুরি তথ্য সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় তারা কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। ব্রিটিশ সরকারের ইনসলভেন্সি বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ২০২৫ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত। কোম্পানির মোট বকেয়া ট্যাক্সের পরিমাণ ২ লাখ ২৮ হাজার ৯২০ পাউন্ড। আদালত সূত্রে জানা যায়, কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ মিলিয়ন পাউন্ড সরানো হয়েছে। এর সুর্নিদিষ্ট রেকর্ড পাওয়া যায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে কোম্পানি বন্ধ ঘোষণার পরও সেটির অ্যাকাউন্ট থেকে চেক ইস্যু করার প্রমাণ মিলেছে। টমি মিয়াকে সম্প্রতি ব্রিটেনের রানি দেওয়া এমবিই অ্যাওয়ার্ড ফেরত নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্কটিশ মিডিয়ায় প্রকাশিত কয়েকটি রিপোর্টে। সূত্রমতে, মারিফিল্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (এমডিএল)চালু হয় ২০০৪ সালে। এর অধীনে পরিচালিত হতো রাজ হোটেল। মোহাম্মদ আজমান মিয়া ওরফে টমি মিয়া এই কোম্পানির পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি। তার স্ত্রী মিসেস আনোয়ারা আক্তার মিয়া এমডিএলের পরিচালক ছিলেন ২০০৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে। প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রম ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর বন্ধ হয় এবং ক্রিসমাসের আগেই তা লিকুইডিশনে চলে যায়। তখন কোম্পানির কাছে বিভিন্ন সরবরাহকারীর মোট পাওনা ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড। কোম্পানি লিকুইডিশনে যাওয়ার পর দুই পরিচালক প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি আদালতে গড়ায়। স্কটল্যান্ডের পত্রিকাগুলো আদালতের বরাত দিয়ে জানায়, কোম্পানি হাউসের তথ্যমতে এই প্রতিষ্ঠানটি গত ৭ জুন বিলুপ্ত হয়। ২৮ জুন প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে ইনসলভেন্সি সার্ভিসের প্রধান কমকর্তা রবার্ট ক্লার্ক বলেন, ‘পরিচালকদের দায়িত্ব হচ্ছে কোম্পানির সব আর্থিক লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা। ইনসলভেন্সি ঘোষণার প্রেক্ষিতে স্বচ্ছতা এবং সমতা সৃষ্টিতে পরিচালকদেরও এসব দায়িত্ব রয়েছে।’ টমি মিয়া ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশের মৌলভীবাজরের বাড়ন্তি গ্রামে জন্ম নেন। ১০ বছরে বয়সে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। ক্যারিয়ার শুরু করেন ক্যাটারিং ইন্ড্রাস্ট্রিতে। ১৭ বছর বয়সে চালু করেন নিজস্ব টেকওয়ে। এডিনবরা রাজ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী টমি মিয়া ব্রিটেন ও বাংলাদেশে একাধিক ক্যাটারিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত।‘ইন্ডিয়ান শেফ অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতা দেশে-বিদেশে বেশ স্বীকৃতি পেয়েছে।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য রান্না করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাংলাদেশে ক্যাটারিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান টমি মিয়া ইন্সটিটিউট অব হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট গড়ে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শেফ আনার ব্যাপারে ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন নীতিমালা শিথিল করার দাবিতে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
হসপিটালিটি ইন্ড্রাস্ট্রি এবং চ্যারিটেবল সেক্টরে অবদান রাখায় ২০১৭ সালে স্কটল্যান্ডের একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত টমি মিয়া এমবিই অ্যাওয়ার্ড পান।
সম্প্রতি তিনি কলকাতা এবং বাংলাদেশে ‘টমি মিয়া ফ্রায়েড চিকেন’ শীর্ষক একটি ফাস্ট ফুড ব্রান্ড চালু করেন।