গেল দুই বছরে সিনেমা হলে দর্শক উপস্থিতি নতুন করে আশা দেখাচ্ছিল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। হলে দর্শক ধরে রাখতে বছরজুড়ে সিনেমা মুক্তির তাগিদ দিচ্ছিলেন অনেকে। অনেক নির্মাতা সেই পথেই হাঁটছিলেন; কিন্তু চলতি বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রায় থেমে গেছে সিনেমার চাকা। এরমধ্যে দেশি সিনেমার পোস্টারবয় শাকিব খানও ব্যর্থ। সম্প্রতি দেশজুড়ে ৮৪টি হলে মুক্তি পায় তার প্রথম প্যান ইন্ডিয়া সিনেমা ‘দরদ’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেশ বড় পরিসরে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। শাকিব খানের এই সিনেমা নিয়ে ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনার কমতি ছিল না। মুক্তির প্রথম দিনে মাল্টিপ্লেক্সে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড গড়ে সিনেমাটি। সিঙ্গেল স্ক্রিনেও শুরুটা খারাপ ছিল না; কিন্তু দুই দিন না পেরোতেই দর্শক-খরায় ভুগছে সিনেমাটি। শাকিবের সিনেমা দিয়ে যেখানে বাজিমাত করার কথা, সেখানে পুঁজি তোলার শঙ্কায় আছেন সিঙ্গেল স্ক্রিনের হলমালিকরা। ফলে সিনেমা নিয়ে কোনো আশার আলোই দেখা যাচ্ছে না।
অবস্থা আরিফিন শুভ ও মন্দিরা চক্রবর্তীর ‘নীল চক্র’ সিনেমার। নির্মাতা মিঠু খান বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম; কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সব ওলটপালট হয়ে গেল। পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজও কিছু আটকে গেছে। তাই এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাড়াহুড়ো করতে চাইছি না। প্রয়োজন হলে আগামী বছর মুক্তি দেব।’
যদিও সরকার পতনের পর পরই একাধিক ছবির ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্মাতারা। ‘আয়নাঘর’, ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, ‘হারুনের ভাতের হোটেল’- এমন ছবিগুলোরও নেই কোনো আপডেট। ‘আয়নাঘর’ নির্মাতা জয় সরকার বলেন, ‘আমি এখনও প্রযোজক পাইনি। কীভাবে শুরু করব। এ ধরনের ছবি নির্মাণ করতে গেলে অনেক টাকার দরকার। ভালো প্রযোজক না পেলে ছবিটি শুরু করব না।’ এফডিসির চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক থেকে শুরু করে সব কলাকুশলী এখন বেকার। কথাটা স্বীকার করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি বলেন, ‘এখন ছবিতে লগ্নিকারক পাওয়া মুশকিল। বিগত সরকার পতন হওয়ার পর অনেক প্রযোজক আড়ালে চলে গেছেন। তবে আশা করছি, খুব শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ এই অবস্থা চলতে থাকলে চলচ্চিত্র পেশায় কাউকে পাওয়া যাবে না।’ ‘এশা মার্ডার-কর্মফল’ ছবিটির টিজার প্রকাশ পেয়েছে রোজার ঈদের আগেই।
কথা ছিল, ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে। সেটি হয়নি দুই দিনের শুটিং বাকি থাকার কারণে। এখনও ছবিটি ঝুলে আছে একই কারণে। নির্মাতা সানী সানোয়ার বলেন, ‘আগস্টেই আমরা শুটিংয়ের পরিকল্পনা করেছিলাম। সেটি তো আর হলো না। এখন আবার নতুন করে অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে শিডিউল নিয়ে বসতে হবে। দুই দিনের শুটিং হলেও ১৪ শিল্পীকে লাগবে আমার। একসঙ্গে এতজনের শিডিউল মেলানোটা কিন্তু বেশ কঠিন। শুধু তা-ই নয়, আমি যদি শুটিং শেষও করতে পারি তার পরও দুই মাস লাগবে পোস্ট-প্রডাকশনে। সব মিলিয়ে এই বছর ছবিটা মুক্তি দিতে পারব না। আগামী বছরের শুরুর দিকে কিংবা কোনো উৎসবে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’

প্রতিনিধি