সিলেট নগরীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে দায়ের হওয়া এ মামলায় ১৪৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক দুই সংসদ সদস্য, সিসিকের এক কর্মকর্তা ও সাবেক আট কাউন্সিলরসহ নামোল্লেখ করা হয়েছে ৯৮ জনের।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) এ মামলটি (নং- ১৬(১১)২০২৪) রেকর্ড করা হয় কোতোয়ালি খানায়। এ মামলার বাদি জগন্নাথপুরের শাহার পাড়ার শাহ জালাল উদ্দিন কামালীর ছেলে ও সিলেট নগরীর নাইওরপুলের বঙ্গবীর ৯৩ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রাহি উদ্দীন কামালী (২৭)।
মামলাটি ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩/৪ তৎসহ দণ্ডবিধির ১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/১০৯/১১৪ ধারায় এ মামলাটি রুজু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক।
মামলার এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা হলেন সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ২০ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খাঁন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সিলেট মহনগর যুবলীগ সভাপতি আলম খাঁন মুক্তির, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জয়গীরদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দে, হাতিমবাগের অজিত কুমার সাহা, জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হিরক রঞ্জন দে পাপলু, টিলাগড় ভাটাটিকরের মোয়াজ্জেম বখত জেম, কাজীটুলার সুদিপ্ত সিংহ, টিলাগড়ের সাদিকুর রহমান আজলা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুহিব উজ সালাম, গোপাল টিলার আরিফ, কুশিঘাটের জাবরুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এজাদ আহমদ বাবু, চামেলীবাগের আবদুল আজিম,মহানগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক সায়মন ইসলাম, যুবলীগ নেতা জাকিরুল ইসলাম জাকির, রেজাউল করিম, ছাত্রলীগ নেতা আসাদ আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান ছামি, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসএম শওকত আমীন তৌহিদ, আবদুল কুদ্দুস, যুবলীগের সুশান্ত রায় শাওন, শাহজালাল উপশহরের মতিউর রহমান চৌধুরী, পশ্চিম ভাটপাড়ার, জুবের আহমদ, সোনারপাড়ার বোরহান উদ্দিন, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ইমদাদুল হক জীবন, জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য শিহাব উদ্দিন, ওসমানীনগরের বেগমপুরের জয়নাল আবেদীন জুনেদ ও আফসর আহমদ, গোপালটিলার শিপলু সরকার, পূর্ব সাদাটিকরের লাকী মিয়া, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সদস্য ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, ১৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সয়ফুল আমিন বাকের, মহানগর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি এনামুল হক লিলু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি এনায়তুল বারী মোর্শেদ, লালাবাজারের বাবুল মিয়া, মিরাবাজারের আলহাজ্ব মোহাম্মদ জামিল চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আবু জাফর, ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি চৌধুরী মাছুম, ছাত্রলীগ নেতা আহসান আহমদ রাহাত, টুলটিকরের আলী হোসেন রুবেল, শাহপরাণের বারেক আলী, জৈন্তাপুরের নাঈম আহমদ, কানাইঘাটের আবদুল বাছিত, ২১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা কৌশিক চৌধুরী,আরিয়ান তারেক ওরফে ক্যাডার আরিয়ান, ৪২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ববস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ একলিম আবদীন, ২৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. তৌফিক বক্স, ২৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তাকবির আহমদ পিন্টু, ১৯,২০ ও ২১ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নার্গিস সুলতানা, ৮ নং ওয়ার্ডের মো. মিছির আলী, ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলী আক্তার চৌধুরী রুমি, ছাতক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিন, ছাতকের বিল্লাল আহমদ, ইমরান হোসেন শামিম, আব্দুল মতিন আকাশ, মাহবুর রহমান, গোলাপগঞ্জের সামাদ আহমদ, ওসমানীনগরের সুজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, মহানগর যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজ ওরফে রামদা মোস্তাফিজ, সাবেক কাউন্সিলর রেহান পারভেজ রিপন, জাহানপুরের সিদ্দেক আহমদ, লালাবাজারের আব্দুল আলী, কাদিয়ানীর মো. জমির উদ্দিন, হরিপুরের আরিফ উদ্দিন, ৪০ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা খাইরুল ইসলাম অপু, জকিগঞ্জের শাহাব উদ্দিন, বিয়ানীবাজারের ইমদাদুল হক জীবন, আফজাল আহমদ তাফাদার, সয়দুল রহমান, কানাইঘাটের মো. সেলিম উদ্দিন, আফজাল আহমদ তাফাদার, গোলাপগঞ্জের মিসবা উদ্দিন ওরফে আরিয়ান খান, ছাতকের ফয়সাল আহমদ, জাহানপুরের ছাদিক আহমদ, লালাবাজারের সেলিম মিয়া, নূর উদ্দিন, লামাপাড়ার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কাস্টঘরের সেলিম আহমদ ও লালাবাজার রাজাপুরের মালিক মিয়া।
এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে।
মামলার এজাহারের ভাষ্যমতে, বাদির অংশগ্রহণে ৪ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল সোবানীঘাট ইবনে সীনা হাসপাতালের সামনে থেকে কোর্ট পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল। এসময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, কাটা রাইফেল, পাইপগান রামদা ছিটা, গুলি চাইনিজ কুরাল ককটেল পেট্রোল বোমা সাউন্ড গ্রেনেডসহ মারাতত্মক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়।আন্দোলনকারীদের মারপিট করে ককটেল বোমা, সাউন্ড গ্রেনেড, পেট্রোল বোমার বিস্ফেরণ ঘটায় এবং কাটা রাইফেল, পাইপগান থেকে গুলি ছুড়ে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আসামিদের ছোড়া গুলি বাদির শরীরে লাগে। বাদিকে মৃত ভেবে আসামিরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। পরবর্তীতে একজন অটোরিকশা চালক রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বাদিকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।