বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আবেদন পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। ৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে এই অভিযোগ করেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
অভিযোগে দাবি করা হয়, ৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের নামে’ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী, বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ এবং বাংলাদেশ পুলিশের উপর ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংগঠিত হয়েছে। এই অভিযোগে প্রায় ৮০০ পৃষ্ঠার তথ্য ও নথিপত্র প্রমাণস্বরূপ যুক্ত করা হয়।
ড. ইউনূস ছাড়া যাদের নাম পিটিশনে রয়েছেন- উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আসিফ নজরুল, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, হাসান আরিফ, মো. তৌহিদ হোসেন, আদিলুর রহমান খান, আলী ইমাম মজুমদার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, ফারুক-ই-আজম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, নূর জাহান বেগম, বিধান রঞ্জন রায়, ফরিদা আখতার, শারমিন এস মুরশিদ, আ ফ ম খালিদ হাসান, সুপ্রদীপ চাকমা, সচিব ড. আব্দুল মোমেন, মো. মশিহুর রহমান, মো. জসিম উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসিফ, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান, ক্যাপ্টেন শুভ আফ্রিদি, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি মাহফুজ আলম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান, হাসিব আল ইসলাম, আবু বকর মজুমদার ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহবায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি, সদস্য সচিব আকতার হোসাইন রয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি একজন ভিকটিম। আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি একজন নির্বাচিত মেয়র, কিন্তু আমাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং আমিসহ আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপর তারা আক্রমণ করেছে, নির্যাতন করেছে। এ জন্য আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমিই প্রথম (অভিযোগ) শুরু করলাম। প্রায় ১৫ হাজার ভিক্টিম আছেন যারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করবেন।’
এসময় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাশে ছিলেন ব্যারিস্টার গোলাম মারুফ মজুমদার (নিঝুম মজুমদার) ও ব্যারিস্টার মনিরুল ইসলাম মঞ্জু।
৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যূত্থানে সরকার পতনের পর লাপাত্তা হন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পরে জানা যায় তিনি ভারত হয়ে লন্ডনে চলে গেছেন এবং সেখানে অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিচার চাওয়ার জায়গা নেই, তাই আমরা আইসিসিতে অভিযোগ করেছি। তারা সেটি গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেছেন। শিগগিরিই হত্যা, গুম-খুন, রাহাজানিসহ ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ড. ইউনুস, অন্তর্বর্তী সরকারের সকল উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ জড়িত সবাইকে ডাকা হবে। আমরা আশা করি, ন্যায়বিচার পাব।’