প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাড়ছে আলু-পেঁয়াজের দাম। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও আলুর দাম বাড়ছে ধীরগতিতে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল ১০-২০ টাকা। তার আগের সপ্তাহেও একই পেঁয়াজের একইরকম দাম বেড়েছিল। আজও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এখন বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। এদিকে গত সপ্তাহে লাল ও সাদা আলুর দাম বেড়েছিল প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে। আজ আবার বেড়েছে ৫ টাকা। সে হিসাবে আজকে লাল ও সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। আর বগুড়ার আলুর দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
অপরদিকে বাজারে বেশ কয়েকটি সবজির দাম কমেছে, বেড়েছেও কয়েকটির দাম। দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু তারা বলছেন দাম আরও কমতে হবে। একইসঙ্গে আলু-পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরসহ কয়েকটি কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে আজকের এই বাজার চিত্র পাওয়া গেছে।
বেড়েই চলেছে আলু-পেঁয়াজের দাম
ক্রমাগত আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়ে চললেও মনিটরিংয়ের দিকে নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। বাজারে যে আলু আজ শুক্রবার ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে— তা পাড়া-মহল্লার দোকানে বা ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা পর্যন্ত। একই চিত্র পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও।
আজকের বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪০-১৫০ টাকা করে। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা করে। এছাড়া লাল আলু ৭০ টাকা, সাদা আলু ৭০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যায়, আজকে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। লাল ও সাদা আলুর দাম বেড়েছে ৫ টাকা করে কেজিতে। আর বগুড়ার আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এছাড়া চায়না আদার দাম কমেছে কেজিতে ৪০ টাকা। আর অন্যান্য পণ্যের দাম আছে আগের মতোই।
আলুর দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, এই সময়ে বাজারে নতুন আলু থাকার কথা ছিল, কিন্তু এখনও নতুন আলু সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই দাম বেড়েছে। নতুন আলু না থাকায় পুরান আলুর ওপর চাপ বাড়ছে। কোল্ডস্টোরেও যা আলু ছিল তা শেষের দিকে। তাই এখন আলুর দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবেও একই কথা বলেছেন এই বিক্রেতা।
বেসরকারি চাকরিজীবী মাহফুজুর রহমান বলেন, বাজারে সবজির দাম অনেকটাই কমেছে, এটা একটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু আলু-পেঁয়াজের মতো পণ্য যেগুলো সবসময় লাগে, সেগুলোর দাম বেড়ে গেলো। এভাবে হলে আমরা চলবো কীভাবে? একটার দাম কমে তো আরেকটার দাম বাড়ে। এদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।
সরোয়ার নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গরিব মানুষ যে আলু ভর্তা ও ডাল দিয়ে ভাত খাবে, সেটাও মনে হয় কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা বাসায় প্রতিদিন কমবেশি আলু-পেঁয়াজ লাগে। এখন যদি এগুলোর দাম বাড়তেই থাকে তাহলে তো আর চলে না।
কমছে সবজির দাম
গত সপ্তাহের তুলনায় আজকে বেশ কিছু সবজিরই দাম কমেছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সবজির দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। আজকের বাজারে নতুন আলু প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, ভারতীয় টমেটো কেজি ১৪০-১৫০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, শিম ১০০- ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০-১০০ টাকা, শসা ৬০-১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটোল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতা ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে শিমের দাম কমেছে ২০-৪০ টাকা, লম্বা বেগুনের দাম কমেছে ২০ টাকা, কাঁকরোলের দাম কমেছে ২০ টাকা, মুলার দাম কমেছে ১০ টাকা, পটোলের (দেশি) দাম কমেছে ৪০ টাকা, ধুন্দলের দাম কমেছে ২০ টাকা, ঝিঙার দাম কমেছে ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার দাম কমেছে ১০ টাকা।
তবে প্রতি কেজি দেশি শসার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, উচ্ছের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, করলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা, ধনে পাতার দাম বেড়েছে ৫০ টাকা, চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, ফুলকপির দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজি বিক্রেতা মো. রাজিব বলেন, দাম আসলে ওঠানামা করে প্রতিদিনই। এখন যেসব সবজির সিজন শেষ সেগুলোর দাম এখন বেশি এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যান্য সবজির দাম যে অনেক কমে যাবে এটা বলা যাচ্ছে না।
ফারুক হোসেন বলেন, সবজির দাম কমে এসেছে, তবে আরও কমা উচিত। কারণ দাম কমেছে ঠিকই কিন্তু এটাকে তো আর কম দাম বলা যাবে না।
আজকে বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আজকে ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৭৩-২০৫ টাকা, কক মুরগি ২৮৮-২৯৮ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৮-২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা, সাদা ডিম ১৪০ টাকা।
বাজার ভেদে কক মুরগির দাম কমেছে কেজিতে ২-১২ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ২-১০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আর প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম কমেছে ৫ টাকা করে।
এছাড়া আজকের বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ কেজি ১৬০০-২০০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০-৫০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০-৪৬০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০- ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪৫০-৭০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাজলী মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, চিতল মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামা করলেও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে দাম অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
মুদি দোকানে ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতি লিটারে খোলা সরিষার তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা।