কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে নাফ নদের মোহনায় মাছ শিকারের সময় অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ জেলেকে এখনও ছেড়ে দেয়নি মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। জেলেদের ফেরত না দেওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। জানা গেছে তাদের ফেরত আনার বিষয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এ বিষয় জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনার বিষয়ে কাজ চলছে। দু-একদিনের মধ্যে জেলেদের ফেরত আনা সম্ভব। তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের নৌকার মালিক টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের এখনও মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ফেরত দেয়নি। ফলে পরিবারের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করছে।’
ওই জেলেরা সবাই টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা। তারা হলেন– মো. হাসিম (৩০), মো. হোসেন (২০), মহি উদ্দিন (২২), এনায়েত উল্লাহ (৩২), আব্দুল শুক্কুর (৩৫), নুর হাফেজ (২২), মো. ইয়াছিন (৩০), আবদুর রহিম (২৪), হাসান আলি (৩৩), ওসমান গনি (৩০), শাহ আলম (২২), আসমত উল্লাহ (২০), আব্দুল শুক্কুর (২৬), আবুল হোসেন (১৭), আয়ুব খান (৩০), নুর হোছন (২২), মো. বেলাল (১৮), সলিম (২৭), আবদুল কাদের (২২) ও ইবনে আমিন (৩৫)।
অপহরণের শিকার জেলে ইবনে আমিনের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারে একমাত্র আয় করতো ছেলে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় আমরা খুব চিন্তায় আছি। কারণ এর আগে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে আমাদের জেলের মৃত্যু হয়েছে।’
স্থানীয় জেলে নুর আলম বলেন, ‘বারবার জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই মাছ শিকারে যাওয়া জেলেরা খুব ভয়ে আছেন। তা ছাড়া গতকাল ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ছেড়ে দেয়নি। এ কারণে জেলে পরিবারগুলো দুচিন্তায় আছে।’
জেলেদের ফেরত আনতে বিজিবি মিয়ানমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘জেলেদের ভূলের কারণে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধ থাকলেও জেলেরা তা অমান্য করে শিকারে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে আমরা জেলেদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করছি।’
এর আগে গত ৬ অক্টোবর সকালে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায় ছয়টি ট্রলারসহ ৫৮ জন জেলে এবং মাঝিমাল্লারা। তাদের ৯ অক্টোবর অপহরণ করে সে দেশের নৌবাহিনী। এ সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিড বোট থেকে বাংলাদেশি একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের একজন ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে জেলেদের ফেরত দেওয়া হয়। তখন এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। এ ছাড়া ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত এনেছিল বিজিবি।