স্কুলের পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার পটুয়াখালীর দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এদিন স্কুলমাঠে গণঅধিকার পরিষদের জনসভা হয়। গণঅধিকার পরিষদের দশমিনা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মো. লিয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল হক নুর।
জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর থেকে পটুয়াখালীর দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনি পরীক্ষা চলছিল। বুধবার (৩০ অক্টোবর) ছিল ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা। যেটি দুপুর দেড়টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এগিয়ে আনা হয় সকাল ১০টায়, শেষ হয় দুপুর ১টায়। এদিকে, এদিন বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত স্কুলমাঠে চলে গণঅধিকার পরিষদের জনসভা।
বিষয়টি নিয়ে মামুন মৃধা নামে একজন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন, ‘রাজনৈতিক দলের জনসভার জন্য পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করায় অসন্তোষ বিরাজ করছে কোমলমতি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।’ আবু আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করে জনসভার অনুমতি পায় কী করে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন সৈকত বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের জনসভার কারণে পরীক্ষা সকাল ১০টায় আনছি। ইউএনও স্যার পারমিশন দিয়েছেন, তাই আমিও পারমিশন দিয়েছি।’
গণঅধিকার পরিষদের দশমিনা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মো. লিয়ার হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। জনসভার অনুমতি দিয়েছেন দশমিনার ইউএনও।’
জানতে চাইলে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসান বলেন, ‘পারমিশনের কপিগুলো কোথায়, একটু দেখাইতে বলেন। কোনও পারমিশনই তাদের দেওয়া হয়নি। জনসভার পারমিশন তো ডিসি মহোদয়ের অফিস থেকে দেবে। জনসভার বিষয়ে পারমিশন আমার এখানে দেওয়ার নাই। আর স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে যে তারা প্রোগ্রাম করছে, সেই বিষয়ে তো আমার কাছ থেকে পারমিশন কেউই নেয়নি। না স্কুল কর্তৃপক্ষ, না ওনারা। ওনারা জনসভার পারমিশনের আবেদন ডিসি স্যারের কাছে দিয়েছেন। ডিসি স্যার সেটা এসপি মহোদয়কে দিয়েছেন। এসপি মহোদয় সেটা থানার ওসিকে দিয়েছেন। থানার ওসি সেটা তদন্ত করে তাদের অফিসিয়াল রিপোর্ট করেছে। এটা হচ্ছে সেই মাধ্যম। এটা আমার কাছে তারা জাস্ট একটা অনুলিপি দিয়েছে। এখানে আমাদের লিখিতভাবে কোনও অনুমতি দেওয়ার সুযোগই নাই। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এখন পর্যন্ত কোনও বিষয়ই আমার সঙ্গে শেয়ার করেননি। উনি তার নিজের সিদ্ধান্তমতো এই বিষয়গুলো করেছেন।’
জনসভায় নুরুল হক নুর ইউএনও ইরতিজা হাসানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি দেখবো, সত্যতা পেলে এখান থাকে বিতাড়িত করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশাসনে কীভাবে দলীয়করণ করা হয়েছিল। আমি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আপনারা যদি কোনও রাজনৈতিক দলের গোলামি করেন, তাহলে প্রজাতন্ত্রের চাকরি করতে পারবেন না।’ এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) সংসদীয় আসনে নির্বাচন করার ঘোষণাও দেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।