দখলদার ইসরাইল ভেবেছিলো চোরাগোপ্তা আর সন্ত্রাসী হামলায় লেবানের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হলে প্রতিরোধ আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু, প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো বারবারই প্রমাণ করেছে, নেতাদের হত্যার মাধ্যমে কোন আন্দোলনকে দমন করা যায় না, আরও বেগবান হয়।
সবশেষ খবর হলো হিজবুল্লাহ আবারও তাদের নতুন কান্ডারিকে খুঁজে নিয়েছে। লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নতুন প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন শেখ নাঈম কাশেম। তিনি এর আগে দলটির উপপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি সংগঠনটির সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত হবেন।
গেল সেপ্টেম্বরে বৈরুতের দক্ষিণ ইসরাইলের ভয়াবহ সন্ত্রাসী বোমা হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ’র প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। ওই সময় শোনা গিয়েছিল স্থলাভিষিক্ত হবেন হাসিম সাফিউদ্দিন। তবে নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ না পেরুতেই ইসরাইলের আরেক সন্ত্রাসী হামলায় সাফিউদ্দিনও মারা যান।
অবশেষ এক মাসের বেশি সময় পর নাঈম কাশেমকে নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণা করলো হিজবুল্লাহ। এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার হিজবুল্লাহ বলেছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শুরা কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে হিজবুল্লাহর নতুন মহাসচিব হিসাবে শেখ নাঈম কাশেমকে নির্বাচিত করেছে।
বিবৃতিতে সংগঠনটি নতুন প্রধানের মঙ্গল কামনা করে আরও জানিয়েছে, নাঈমের নেতৃত্বে সংগঠন আরও জোরালো হবে এবং বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধের লড়াইয়ে শিখা জ্বালিয়ে রাখার পাশাপাশি আল্লাহ’র কাছে প্রতিশ্রুত সব ধরণের ওয়াদা পূরণে কাজ করে যাবেন শেখ নাঈম কাশেম।
হিজবুল্লাহ আরও বলেছে, সংগঠনের নীতি ও লক্ষ্যগুলোর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্যের জন্যই নাঈম কাশেমকে এই পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যেন তিনি তাকে হিজবুল্লাহ ও তার ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের এই মহৎ মিশনে পরিচালনা করতে পারেন।
কাশেম তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহর উপ-মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সঙ্গে হিজবুল্লাহর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন। আমিরাতের ওয়েবসাইট আরাম নিউজ জানিয়েছে যে, হত্যা চেষ্টার হুমকি থাকায় গত অক্টোবর থেকেই কাশেম ইরানের একটি নিরাপদ স্থানে বাস করছেন।
ইরানের একটি সূত্র উল্লেখ করে আরাম নিউজ আরও জানিয়েছে যে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে নাঈম কাশেম একটি ইরানি বিমানে বৈরুত ছেড়ে দামেস্কে যান এবং সেখান থেকে তিনি তেহরানে চলে যান। এরপর থেকে নাঈম সেখানেই আছেন। তবে তার অবস্থান কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়েছে।
হাসান নাসরুল্লাহ জীবিত থাকতেই ৭১ বছরের নাঈমকে হিজবুল্লাহর ‘দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হতো। ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে গোষ্ঠীটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় পণ্ডিত তিনি। নাঈম কাশেম ১৯৯১ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আব্বাস আল-মুসাভির আমলে হিজবুল্লাহর উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। মুসাভি পরের বছর ইসরাইলি হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন।