আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করার পর সংগঠনটির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সই করা বিবৃতিটি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়।
‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান এবং অবৈধ, অসাংবিধানিক, দেশবিরোধী সরকারের পদত্যাগ দাবি’ শিরোনামের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলা ভাষা, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবিক মর্যাদায় যুগে যুগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রয়েছে লড়াকু ইতিহাস।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব ও আত্মদান থেকে শুরু করে পরবর্তীতে জনগণের সব আন্দোলনেও যুগপৎ স্রষ্টা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ ছাড়াও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ, সাম্য-মানবিক ও কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র বিনির্মাণে সোচ্চার থেকেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের অন্তরের আকুতিকে অনুধাবন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে একটি যৌক্তিক সংস্কার ও সমাধানের জন্য সর্বাত্মক ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘মেটিকিউলাস প্ল্যানের’ (সূক্ষ্ম পরিকল্পনায়) অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীদের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি ও রাষ্ট্রবিরোধী কুচক্রী স্বার্থান্বেষী মহল।
এতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিদ্যমান সংকটে যখন দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি, লাগামহীন অরাজকতা, মব জাস্টিস, হাজার-হাজার দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা প্রবল- তখনই এসব লুকানোর জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা যখন ১৫ জুলাই থেকে সংঘটিত প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের আয়োজন করেছিলেন, তখন এই অবৈধ সরকার হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে দায়মুক্তি দিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে তা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট। এ দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চি মাটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, লাল-সবুজের পতাকা থাকবে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ থাকবে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের প্রকম্পন থাকবে- ততদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থাকবে অমর, অক্ষয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের ওপর অন্ধকার নিয়ে আসা এই অবৈধ, দেশবিরোধী সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সরকার প্রতিষ্ঠায় এ দেশের ছাত্র-তরুণ সমাজ, কৃষক-শ্রমিক ও জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সারা স্বদেশের আন্দোলনে মৃত্যুঞ্জয়ী নাম স্বদেশ গড়ার শপথে দীপ্ত আমাদের সংগ্রাম।
এর আগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮-এর উপ-ধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং ওই আইনের তফসিল ২-এ ছাত্রলীগ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার কথা বলা হয়।
প্রজ্ঞাপনে স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রামাণ্য তথ্য এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে বলে বলা হয়। চলতি বছরের ১৫ জুলাই থেকে সশস্ত্র আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।