বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য় পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে খুলনাসহ এ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। খুলনা শহরে দুপুর ২টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলে। এরপর থামলেও রাত পৌনে ২টায় আবারও শুরু হয়।
খুলনা আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বুধবার রাতে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ এখন পর্যন্ত যেদিকে আছে তাতে বাংলাদেশের তেমন ঝুঁকি নেই। তবে এটি যদি দিক পরিবর্তন করে আরও ডানে সরে যায়, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চল, অর্থাৎ খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হবে। খুলনার দিকে হালকা ঝোড়ো হাওয়াও থাকতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য অঞ্চলেও কমবেশি বৃষ্টি হবে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা বাঁয়ে সরে গেলে বৃষ্টিপাতও কমবে বাংলাদেশে। অন্যদিকে কিছুটা ডানে সরলে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাসও বয়ে যাবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টি যে পথ দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে, তা ভারতের উপকূল। তার ডান দিকে বাংলাদেশের উপকূল। ফলে এটি সরাসরি স্থলভাগে আঘাত না করলেও এর প্রভাব থাকবে দেশের উপকূলে। ঘূর্ণিঝড়ের বাঁ দিকের তুলনায় ডান দিক বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার। এ সব শেল্টারে তিন লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবককে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার ও ওষুধ। স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বুধবার দুপুরের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় নিতে পারেন। এসব শেল্টারে মোট তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদিপশু রাখা যাবে।