মহা সংকটে পড়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এখন কী করবেন, নিজেই বুঝে উঠতে পারছেন না। তার পদত্যাগ ও অপসারণ প্রশ্নে সারা দেশ এখন উত্তপ্ত। তার পদচ্যুতি চেয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। খোদ বঙ্গভবনের সামনেও বিক্ষোভ থেকে তার পদত্যাগের জোরালো দাবি উঠেছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে বিজিবির দুই প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কার্যত তিনি নজরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গভবনের বাইরে কী ঘটছে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছেন। এর জন্য বিশ্বস্ত দুয়েকজনকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন তিনি। তবে মঙ্গলবার থেকে রাষ্ট্রপতির দিকে কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে তিনি কোথায় টেলিফোন করছেন, কার সঙ্গে কথা বলছেন তা নজরে রাখা হচ্ছে। তার লাল টেলিফোনটির ব্যবহার ক্ষেত্রে সংকোচন করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, বঙ্গভবনে যারা বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। এমনকি তার প্রেস সচিবের টেলিফোনও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রেবেকা সুলতানা একসময় সরকারি আমলা ছিলেন। সেই সুবাদে সরকারি অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। তবে এখন তারও যোগাযোগের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তার গতিবিধি অনুসরণ করার জন্য বিশেষ ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি এখন কী করবেন তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ঘন ঘন তার কাছে খবর যাচ্ছে, দেশের মানুষ তাকে রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে আর চায় না। যে কারণে তিনি সিদ্ধান্তহীনতায়ও ভুগছেন। বুঝে উঠতে পারছেন না এখন কী করতে হবে তাকে। এ ছাড়া তিনি বুঝে গেছেন তিনি এখন বিশেষ ব্যবস্থার বেড়াজালে বন্দি। তার সঙ্গে যেন কেউ সহজে যোগাযোগ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে বঙ্গভবনের অনেকের টেলিফোন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সেনাপ্রধান যদি দেখা করতে চান, সে ক্ষেত্রে আগাম বিশেষ সিগন্যালের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে’ সংবিধানের ৫৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের সুযোগ রয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এখন যেহেতু সংসদ নেই তাই রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান মেনে অভিসংশন বা অপসারণের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাইতে পারে।
সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা তার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় নিজের দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু স্পিকার আগেই পদত্যাগ করেছেন। তাহলে কী হবে? এ বিষয়ে আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ অনুযায়ী পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন, প্রধান উপদেষ্টা গ্রহণ করবেন।