আলী নুর মোহাম্মদ ছামুয়েল নামে এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবকের বিরুদ্ধে ভাড়ার টাকা না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন সিলেট মহানগরের মিরের ময়দান এলাকার কেওয়াপাড়ায় অবস্থিত জিরান গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক পরিচয়ে মো. গোলাম রব্বানী নামের যুবক বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
গোলাম রব্বানীর পক্ষে ফয়েজ উদ্দিন নামের যুবক লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে জানান- চলতি বছরের ২ জুলাই জিরান গেস্ট হাউসে বোর্ডার হিসেবে উঠেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর (কলুমা-৩১২৮) এলাকার জুনায়েদ আহমেদের ছেলে লন্ডন প্রবাসী আলী নুর মোহাম্মদ ছামুয়েল। তার চাচা জয়নাল সাহেব জিরান গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের পরিচিত হওয়ায় ছামুয়েলকে অগ্রিম ছাড়াই কক্ষ ভাড়া দেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর ছামুয়েলের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে কর্তৃপক্ষ তার কাছে ভাড়া পরিশোধের তাগিদ দেন। পরে ২০ আগস্ট ভাড়া বাবদ এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা একটা চেক (প্রাইম ব্যাংক) প্রদান করেন ছামুয়েল। এরপর বিনা নোটিশে তিনি গেস্ট হাউস থেকে চলে যান। কিন্তু ছামুয়েলের দেওয়া চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলে জানা যায়- তার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। এ ব্যাপারে গত ২১ অক্টোবর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিডি (নং-১৭৬০) করেন গোলাম রব্বানী।
সংবাদ সম্মেলনে গোলাম রব্বানী আরও জানান, চেক বাউন্সের পর ছামুয়েলকে তারা খুঁজতে থাকনে এবং একপর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী হোটেল ফার্মিস গার্ডেনে তার অবস্থান শনাক্ত করেন। এসময় জিরান গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষ হোটেল ফার্মিস গার্ডেনে তার কৃতকর্মের বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। হোটেল ফার্মিস গার্ডেনের ম্যানেজার এসময় ছামুয়েলকে জিরান গেস্ট হাউসের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধাণ করার অনুরোধ করেন। এ সময় ফার্মিস গার্ডেন কর্তৃপক্ষকে ছামুয়েল বলেন- জিরান গেস্ট হাউস ও ফার্মিস গার্ডেনের সকল টাকা পরিশোধ করেই তিনি তার জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি টাকা পরিশোধ না করে বানোয়াট গল্প সাজিয়ে ব্রিটিশ দূতাবাসের দ্বারস্থ হন। পরে ব্রিটিশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ ছামুলের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে চাইলে তাদের সম্মানার্থে ফার্মিস গার্ডেন কর্তৃপক্ষ মালামাল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
জিরান গেস্ট হাউসের গোলাম রব্বানী বলেন- ‘ছামুয়েলের প্রতারণার শিকার আমরা। ছামুয়েলের প্রতারণার কারণে আমাদের ব্যবসায়ীক সম্মানহানী এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার দেওয়া চেকের মাধ্যমে আমরা ভাড়ার টাকা না পেয়ে যে জিডি করেছি, সেটির তদন্ত চলছে। এছাড়া আদালতে আমরা মামলা করা প্রস্তুতি নিয়েছি।
জিরান গেস্ট হাউসে থাকাকালে ছামুয়েলের কাছে এক নারী ঘনঘন আসতেন অভিযোগ করে গোলাম রব্বানী জানান- পরিচয় জানতে চাইলে ওই নারীকে ছামুয়েল তার চাচাতো বোন বলে পরিচয় দেন।
তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম রব্বানী বলেন- ‘আমাদের গেস্ট হাউসে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। তাই এ বিষয়ের কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই।’
এদিকে, গত ১৫ অক্টোবর সিলেট মহানগরের পূর্ব জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে জিরান গেস্ট হাউস ও হোটেল ফার্মিস গার্ডেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন প্রবাসী আলী নুর মোহাম্মদ ছামুয়েল। তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন- নির্ঝঞ্জাটভাবে তিনি তাঁর সফটওয়্যার কোম্পানির কাজ করার জন্য গত আগস্টে দেশে এসে জিরান গেস্ট হাউসে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে উঠেন। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় ২০ আগস্ট হোটেল ফার্মিস গার্ডেনে অগ্রিম ৭ দিনের ভাড়া দিয়ে রুমে উঠেন। ৫ দিনের মাথায় তিনি একটি কাজে বেরিয়ে ২৭ আগস্ট হোটেলে ফিরে মালামাল নিয়ে রুম ছাড়তে চাইলে হোটেল স্টাফরা মালপত্র দিতে রাজি হননি। এসময় প্রবাসী ছামুয়েল ফোনে হোটেলের ম্যানেজার রাফির সঙ্গে কথা বললে তিনি দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু অগ্রিম বিল পরিশোধের পরও কেন তাকে টাকা দিতে হবে- এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তাকে ম্যানেজার দেননি।
বিষয়টি নিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়ে ছামুয়েল লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ সেটি গ্রহণ করেনি। পরে আরেক দফা তিনি পুলিশের সহযোগিতা চাইলে কোতোয়ালি থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুনু মিয়া কোনো সহযোগিতা না করে ছামুয়েলের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
পরে বাধ্য হয়ে স্যামুয়েল বাংলাদেশে অবস্থিত ব্রিটিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চান। হাইকমিশনেরর হস্তক্ষেপে ১ অক্টোবর এসএমপি’র দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্যামুয়েলকে সঙ্গে নিয়ে ফার্মিস গার্ডেন থেকে তার ল্যাপটপ ও পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল উদ্ধার করেন। তবে জামাকাপড় ও প্রসাধনীসামগ্রীসহ কিছু ব্যক্তিগত মালপত্র এখনো সেখানে রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন প্রবাসী ছামুয়েল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ছামুয়েল সেদিন বলেন- ‘জিরান গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার মো. রব্বানি আমার কাছে বড় অংকের আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাৎক্ষণিক দিতে সম্মত হইনি বলে তিনিই মূলতঃ এসব ঘটনার কলকাটি নেড়েছে।’