Home » সিলেটের আরিফের ভাগ্য ঝুলছে

সিলেটের আরিফের ভাগ্য ঝুলছে

দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। বরিশালে সাবেক মেয়র দলের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ও রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। গতকাল রবিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। আজ সোমবার সিলেটের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।’

‘এদিকে, বরিশাল ও রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী ঘোষণা হলেও সিলেটের প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে এখানো দ্বিধায় আছে বিএনপির নেতারা। জানা গেছে, দলীয় কোন্দলের কারণে সেখানকার প্রার্থী নির্বাচনে বিলম্ব হচ্ছে। যার কারণে দলটির সর্বাধিক আলোচিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হকের ভাগ্যই কেবল ঝুলে আছে। সিলেটে মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তৃণমূল ও নেতাদের সঙ্গে যাদের সুসস্পর্ক রয়েছে, দল তাদেরই মূল্যায়ন করবে। এ ক্ষেত্রে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নেতারও পরিবর্তন হতে পারে।’

‘খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরিফের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে চলতি বছরের শুরুতেই। এ বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির কাছে চিঠিও পাঠায়।

‘এসব চিঠির অনুলিপি ওই সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছেও পৌঁছে দেয়া হয়। সিলেট বিএনপির নেতারা জানান, সিলেট মহানগর বিএনপির প্যাডে লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ তোলা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল, নেতাকর্মীদের সঙ্গে ‘বিমাতাসুলভ আচরণ।’

‘এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর ?ও সুরমা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত গড়ে তুলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংবর্ধনা দেয়া।’

এমনকি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বাদী সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার সামাদের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করানোর ছবিও ওই চিঠিতে যুক্ত করা ছিল।’

‘আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন ইসি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই সিলেট সিটির মেয়র পদে নতুন প্রার্থীর দাবি তুলেছে বিএনপির প্রভাবশালী স্থানীয় নেতারা। এ বিষয়ে আলাদা করে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন তারা। বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, দল থেকে আরিফকে পুনরায় মেয়র পদে প্রার্থী করা হলে তারা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকবেন। বৈঠকে মেয়র পদে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের সমর্থনে সিটি করপোরেশনের বিএনপির দলীয় কাউন্সিলররা অংশ নেন।’

সূত্র জানায়, সব প্রার্থী নিজেদের ভেতরে আলোচনার মাধ্যমেই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা বিএনপি থেকে আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। ২০১৩ সালের সিসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন আরিফ। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলীয় কর্মকাণ্ডে তার খুব একটা দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী অন্য প্রার্থীরা।’

এদিকে, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আরিফের সুসম্পর্ক থাকাটা নগরবাসী ইতিবাচক হিসেবে নিলেও ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতারা।’

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ববর্তী বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে ছিলেন না আরিফ। দলীয় আন্দোলন-সংগ্রামে জড়িয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা ডজন ডজন মামলার শিকার হলেও আরিফ এ ব্যাপারে নিশ্চিন্তে দিন কাটিয়েছেন।’

‘জানা যায়, ৩ সিটির বিষয়ে প্রাথী চূড়ান্ত করতে গত সোমবার গুলশানে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। ঐ বৈঠকেও আরিফের বিষয়ে অন্য নেতাকর্মীদের অভিযোগের বিষয়গুলো উঠে আসে। ‘পরের দিন মঙ্গলবার সিসিকের মেয়র প্রার্থী হতে বিএনপির মনোনয়ন কেনেন আরিফুল হক চৌধুরীসহ অন্য প্রার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার সব মনোনয়নপত্র জমা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।’
‘সাক্ষাৎকার শেষে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, আমরা সিলেটের সব মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দিতে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধ করেছি। কারণ তিনি এখন আর বিএনপির নেতা নেই। দলের কোনো কর্মসূচিতে তাকে পাওয়া যায় না। তাই তার বাইরে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই তার পক্ষ হয়ে নির্বাচনে কাজ করব বলে এসেছি।’ ‘হাইকমান্ড অতীত ও বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবে, এটা আমাদের বিশ্বাস।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *