Home » আনিসের সেই পরিবহন ব্যবস্থা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে

আনিসের সেই পরিবহন ব্যবস্থা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে

৩ এপ্রিল মঙ্গলবার। দুপুরে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের দরজায় দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন। বাসটি হোটেল সোনারগাঁওয়ের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে পৌঁছলে হঠাৎ পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের বাস বিআরটিসি বাসটির গা-ঘেঁষে অতিক্রমের চেষ্টা করে।

দুই বাসের আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় রাজীবের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় হাত। কাটা হাত নিয়ে লড়ার চেষ্টা করেও জীবনযুদ্ধে হেরে যান রাজীব। এর কয়েকদিন পরই বনানীতে বাসের চাপায় পা হারিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোজিনা।’

‘শুধু রাজীব, রোজিনা নন, প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর গণপরিবহনের নৈরাজ্যের মাঝে জীবন হারাচ্ছে মানুষ। বাসে উঠে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে হয় হাত-পা নয় তো জীবন হারাচ্ছেন যাত্রীরা। গণপরিবহনের এই লাগামহীন পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে যাত্রী হয়রানি কমাতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক।’

‘বর্তমানে রাজধানীর ২৪৬টি রুটে মোট ৭ হাজার ৯৩৭টি বাস চলাচল করে। শুধু গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে ৩৫ কোম্পানির ১ হাজার ৯৮০টি বাস। বাসগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো রুট, স্টপেজ ও ভাড়া নির্ধারণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠলেই ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারদের শুরু হচ্ছে বাগিবতণ্ডা। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িতেই দিনের পর দিন চলছে যাত্রীসেবা। তাই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে স্ব-উদ্যোগে মাঠে নামেন মেয়র আনিসুল হক।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় ৩০টি বৈঠক করেন তিনি। সবার সমন্বয়ে একটু একটু করে এগিয়ে যায় পরিকল্পনা। দুই বছরে চূড়ান্ত হয় স্বপ্নবাজ মেয়র আনিসুল হকের রাজধানীর গণপরিবহনকে আধুনিকায়ন ও যাত্রীবান্ধব করার পরিকল্পনা। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান মেয়র আনিসুল হক।’

পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়া বিষয়ে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনকে নির্দিষ্ট ৬টি কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়। যাতে বলা হয় পুরো শহরে রুট থাকবে মাত্র ২২টি। প্রতিটি কোম্পানির গাড়িতে হলুদ, সবুজ, বেগুনি, কমলা এ রকম ৬টি রং দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক রুটে একটি কোম্পানির গাড়ি চলবে।’

‘তিনি আরও বলেন, যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে প্রতিটি গাড়িতে সমপরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। ফলে গাড়িতে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার কোনো প্রয়োজন পড়বে না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের সংস্থান করতে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু মেয়রের মৃত্যুর পর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের জোগানে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে খুব দ্রুত হয়তো এর একটি সমাধান আসবে।’

‘এ পরিকল্পনার বিষয়ে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে ৬টি কোম্পানির আওতায় ৪ হাজার বাস নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। কিন্তু তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ফাইলে বন্দী হয়ে পড়েছে এ পরিকল্পনা। এখন শুনছি অনেক সংস্থা পরিবহন ব্যবসায় নামতে ভীষণ উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। তারা শুধু তাদের লাভের চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে।’

তিনি আরও বলেন, রাতারাতি রাস্তা থেকে অন্য গাড়িগুলো সরিয়ে দিয়ে তো আর ৪ হাজার বাস নামিয়ে দেওয়া যাবে না। এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। সবার তো বাসের ব্যবসায় নেমে ফয়দা লোটার দরকার নেই। আনিসুল হকের পরিকল্পনার বাস্তবায়নেই শৃঙ্খলা ফিরবে রাজধানীর গণপরিহনে।’সূত্র: বিডি প্রতিদিন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *