ইসলামি প্রতিরোধ গোষ্ঠী লেবাননের হিজবুল্লাহর আকস্মিক হামলায় ২০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত বা আহত হয়েছেন। শনিবার (১২ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে গোষ্ঠীটি। সংঘর্ষের তোপে সেনাদের দেহগুলোও উদ্ধার করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণ লেবাননে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম আল-মায়াদিনের বরাতে ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম প্যালেস্টাইন ক্রোনিক্যাল এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার দিবাগত রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সিরিজ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।
শনিবার দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে প্রথম আক্রমণটি হয়। তখন আল-মানারা বসতিতে ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থানে সিরিজ রকেট হামলা চালায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এ ঘটনাটি ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর একটি সম্মিলিত ও অক্লান্ত হামলাকেই চিহ্নিত করছে।
এরপর দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে ইসরায়েল বাহিনীর ওপর দ্বিতীয় আক্রমণটি করে হিজবুল্লাহ। এসময় রামিয়ার কাছে ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থানে নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে গোষ্ঠীটি। এতে ইসরায়েলি বাহিনীর বেশ কয়েকজন সেনা হতাহত হয়। একই স্থানে পরবর্তী হামলায় ইসরায়েলের একটি অস্ত্রবাহী গাড়ি লক্ষ্যবস্তু করে নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হিজবুল্লাহ। ক্ষেপণাস্ত্রটি লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আঘাত হানলে গাড়িতে থাকা ক্রু-সদস্যরা হতাহত হন।
দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি তাল শার এলাকায় ইসরায়েলি অবস্থানে গুলিবর্ষণ করে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। এতে ইসরায়েলি সেনারা অনেকটা দিশেহারা হয়ে যায়।
এর ঠিক আধাঘণ্টা পর, দিবাগত রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে রামিয়া শহরের তাল আল-মান্দাওয়ারে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এসময় একটি বিস্ফোরণ ডিভাইস ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে হিজবুল্লাহ। হামলায় ইসরায়েলি বাহিনীর আরও সদস্য হতাহত হন।
একইভাবে ভোররাত ৪টা ৪৫ মিনিটে রামিয়া শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর আরেকটি অনুপ্রবেশ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটি আবারও বিস্ফোরক নিক্ষেপ করে। এতে আরও কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ আরও বিস্তৃত করে হিজবুল্লাহ। সকাল সাড়ে ৫টায় অধিকৃত লেবাননের শেবা ফার্মেরজেবডাইন ব্যারাকে অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এ হামলা মাত্র মাত্র ১৫ মিনিট অব্যাহত ছিল। হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরায়েলি জারিত ব্যারাকে সরাসরি রকেট হামলা করে। এসময় শক্তিশালী বুরকান রকেটও ব্যবহার করে তারা।
সকাল ৬টার দিকে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি অন্যান্য ইসরায়েলি অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু করে। খিলট ওয়ার্ডে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর একটি সমাবেশ লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় তারা। একই সময়ে, শোমেরা বসতিতে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর আরেকটি রকেট হামলা চালানো হয়। ওই হামলা আরও কিছু ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সকালজুড়ে হিজবুল্লাহ বিরামহীনভাবে একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে আবারও হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। এসময় মারুন আল-রাস শহরে অবস্থানরত ইসরায়েলি বাহিনী কামান দিয়ে গোলাবর্ষণ করে।
লেবাননে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা এই সামরিক অভিযানগুলো পরিচালনা করেছে। ইসরায়েলি হামলায় দেশটির বেসামরিকরা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং সেইসঙ্গে পূর্ব ও বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতেও হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের এই হামলা দেশটিকে একটি মানবিক সংকটের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি লেবানিজ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ।