টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সিলেটে দলীয় প্রভাব ও ক্ষমতা ছিল গুটি কয়েক নেতা ও তাদের ঘনিষ্টজনদের কাছে। সরকার দলীয় নেতা হিসেবে আখের গুছিয়েছেন তারা। দলের হাইব্রিডরা দাপট দেখিয়েছেন ত্যাগী ও বঞ্চিতদের উপর। ত্যাগী মাঠেরকর্মীরা সবসময় থেকেছেন উপেক্ষিত। দলের মধ্যে ‘বিরোধী দলের’ নেতাকর্মী হিসেবে থাকতে হয়েছে তাদেরকে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়ন ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিলেটের প্রভাবশালী বড় নেতারা নিরাপদে দেশ ছাড়েন। এদের মধ্যে অনেকে বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় পালিয়েছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। বেশিরভাগ নেতা প্রথমে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ও পরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। এসব ‘বড় নেতাদের’ অনেকের পরিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তারা সেখানে নিরাপদে রয়েছেন। এখনো ভারতে অবস্থান করা শতাধিক নেতাদের কেউ কেউ ভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।
এদিকে, ‘ছোট নেতারা’ দেশ ছাড়ার সুযোগ ও সামর্থ্য না থাকায় তারা সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। কিন্তু গা ঢাকা দিয়েও তারা নিরাপদে নেই। আত্মগোপনে থাকার দুইমাসের অধিক সময় হয়ে যাওয়ায় নানা কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে পরিবার ও পরিচিতজনদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করছেন। ফলে আইনশৃঙ্খল রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে গ্রেফতার করছে। চলতি মাসের ১১ দিনে সিলেটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই ধরা পড়েছেন র্যাবের হাতে। গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- মহানগরীর ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদ শেখ, ১৬নং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সভাপতি আজিজুল হাকিম রাজু, বালুচর আবাসিক এলাকার ছাত্রলীগ ক্যাডার আবদুল্লাহ, কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মীর আবদুল্লাহ, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক এম নিজাম উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মাসুক, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এইচ ইলিয়াছি দিনার ও যুবলীগ নেতা রেদওয়ান আহমদ বাপ্পী।
সিলেট মহানগরীর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকলেও আমাদের মতো তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। দলের বড় পদবীধারী ও তাদের ঘনিষ্টজনরা আখের গুছিয়েছেন। ১৫ বছর রাজপথের সকল কর্মসূচীতে থাকলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। চিকিৎসার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে হাত পাততে হয়েছে। এখন যারা ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে টাকা কামিয়েছেন, সম্পদ করেছেন তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর আমাদের মতো ছোট নেতাকর্মীরা ঘরছেড়ে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।’